Poaceae গোত্রের এক প্রকার উদ্ভিদ। এর প্রধান পরিচয় খাদ্য শস্য। এটি একবীজপত্রী তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। মূলত গ্রীষ্মপ্রধান এবং অবগ্রীষ্মমণ্ডলে ধানের চাষ হয়। প্রজাতি ভেদে ধান গাছ লম্বায় দুই থেকে দশ-বার ফুট দীর্ঘ হয়। এর কাণ্ড নলাকৃতির এবং গ্রন্থিযুক্ত। এর পাতা দীর্ঘ এবং অগ্রভাগ সুচালো। এই গাছ সমতলভূমিতে ভাল জন্মে। তবে পাহাড়ের ঢালে, জলাভূমিতেও এর চাষ করা হয়।
ধারণা করা ভারত ও চীনে ধান চাষ হয়ে আসছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে। ধানের প্রধান দুটি প্রজাতি হলো− Oryza sativa এবং Oryza glaberrima। এর ভিতরে Oryza sativa হলো এশিয়ার ধান। পক্ষান্তরে Oryza glaberrima আফ্রিকার ধান হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় ১১৪টি দেশে ধানের চাষ হয়ে থাকে। প্রজাতি বা উপ-প্রজাতিভেদ ধান গাছের যে নামই থাক না কেন, স্থানীয়ভাবে এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে।
আবাদ ও জাতির উপর নির্ভর করে ধানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই প্রধান তিনটি ভাগ হলো আমন আউশ ও বোরো।
শীতকালীন ধানকে আমন ধান বলা হয়। এর অপর নাম আগুনী ও হৈমন্তিক। উল্লেখ্য সংস্কৃত হৈমন' বা হৈমন্তিক' শব্দের অপভ্রংশ। আমন ধান তিন প্রকার। যথা—
চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা রোপণ করে এই ধান উৎপন্ন হয় বলে এর এরূপ নাম।
এই আমন ছিটিয়ে বোনা হয়।
বিল অঞ্চলে এই আমন উৎপন্ন করা হয়। এই কারণে গভীর পানির বিলে-আমনও বলা হয়ে থাকে।
আশু (দ্রুত) ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের নাম করা হয়েছে আউশ। এই ধান সাধারণত জন্মে বর্ষাকালের আষাঢ় মাসে। এই কারণে এর অপর নাম আষাঢ়ী ধান। তবে এই ধান বৎসরের যে কোন সময়েই চাষ করা যায়।
সাধারণত নিচু জমিতে এই ধানের চাষ করা হয়। বোরো মূলত রোপণ করে চাষ করা হয়। সে কারণে একে রোপা ধান হিসাবেও কোনো কোনো অঞ্চলে অভিহিত করা হয়। তবে বসন্তকালে এই ধান জন্মে বলে একে বাসন্তিক ধান বলা হয়। ইত্যাদি।
ধানগাছে ধানফল ছড়া আকারে জন্মে। এ ছড়া থেকে ধানবীজ পৃথক করার পর যে দণ্ড পাওয়া যায়, তাকে খড় বা নাড়া বলা হয়। যদিও ধান সাধারণত লম্বাটে হয়ে থাকে। তবে প্রজাতিভেদে লম্বায় বড়-ছোটো হয়। ধানের আবরণ ফেলে দিলে ভিতরে শ্বেতসার প্রধান যে ফল পাওয়া যায়, তাকে চাল বা চাউল বলা হয়। ধানের নামানুসারেই চালের নামকরণ করা হয়। যেমন 'কুমারী ধান-এর চালের নাম হয় 'কুমারী চাল'। ধানের খোসাকে বলা হয়, তুষ।
চাল তৈরির প্রক্রিয়া অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
চাল শর্করা-প্রধান শস্য। কিন্তু এর সাথে অন্যান্য যে সকল খাদ্য-উপাদান পাওয়া যায়, তা হলো ভিটামিন বি-কম্প্লেক্স ও খনিজ পদার্থ। তুলনামূলকভাবে আমিষ ও তৈল জাতীয় উপাদান অতি নগণ্য। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চালকে সিদ্ধ করে ভাত হিসাবে খায়। এশিয়ার বেশিরভাগ অংশের মানুষ, শর্করা জাতীয় খাবার হিসাবে ভাতকে প্রধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া চাল থেকে পিঠে, নানা রকম মুখরোচক মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। মুড়ি, চিড়া ইত্যাদির মতো কিছু খাবার তৈরি করা হয়।জাপান ও চীনে চাল থেকে সাকি নামক চোলাই মদ তৈরি করা হয়। বাংলা মদ তৈরিতে অনেকে ভাত ব্যবহার করে থাকে।
সুত্র: বিকাশপিডিয়া টীম, পশ্চিমবঙ্গ
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/16/2020
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মত। বাংলায় ধানের বয়স ৩৭০০ বছর। ...