অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

পাঙাশ মাছ

পরিচয়

পাঙাশ মাছ স্বল্প নোনা জল এবং মিঠা জলের মাছ। এদের বাহ্যিক চেহারা সুন্দর। অনেক বড় অ্যাকোয়ারিয়ামেও এদের রাখা হয়, কিন্তু খাওয়ার জন্য অন্য মাছের তুলনায় এদের চাহিদা একটু কম। কারণ এই মাছের রং একটু হলুদ এবং এর একটা গন্ধ আছে যা অনেকের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয় — তাই দামও কম। তা ছাড়া মাছ চাষিরা এই চাষে অভ্যস্ত নয়। অনেকেই জানেন না কোথায় এদের চারা পাওয়া যায়, কী এই মাছের চাষপদ্ধতি ? ইত্যাদি। ফলে চাষিদের এই মাছ চাষে একটু অনীহা আছে। কিন্তু অধুনা এই মাছ স্থানীয় বাজারেও বেশ একটা স্থান করে নিয়েছে। এমনিতেই অনেক মৎস্যভোজীর কাছে এই মাছ বেশ পছন্দের, বিশেষ করে অনেক অবাঙালি মৎস্যভোজীর কাছে — কারণ এই মাছের কাঁটা অনেক কম। এ ছাড়া ছোট–বড় রেস্তোরাঁয় বা একটু বেশি তেল–মশলা সহকারে রন্ধনের জন্য এর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি এই মাছের গড় ফলন বা বৃদ্ধি অনেক বেশি; সাধারণ রুই, কাতলা, মৃগেল ফলনের প্রায় ৪/৫ গুণ। তাই ইদানীং অনেক চাষি পাঙাশ মাছ চাষে প্রায়শই আগ্রহ প্রকাশ করেন।

জলাশয় ও চারা প্রয়োগ পদ্ধতি

উপযুক্ত পুকুর বা জলাশয়

যে কোনও জলাশয় যেখানে ভালো সূর্যালোক ও বাতাস চলাচলে বাধা নেই এবং যে পুকুরে সাধারণ মাছ চাষ সম্ভব, সেখানেই পাঙাশ মাছ পালন ও মজুত সম্ভব ও লাভজনক।

পুকুর তৈরি
  • অন্য মাছ চাষের মতোই পাঙাশ মাছের পুকুর ভালো ভাবে আগাছা ও আমাছা মুক্ত করতে হবে।
  • বিঘা প্রতি ৩০ কেজি কলিচুন ভালো করে জলে গুলে পুকুরের জলে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • পুকুরের জলের গভীরতা অন্তত ২ – ২.৫ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • এই মাছ অধিক ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। জলাশয়ের নীচের তল এক দিকে বেশি ও অন্য দিকে কম গভীর হলে জলের উত্তাপের তারতম্য হয়। মাছেরা তাদের পছন্দ ও সহ্যসীমার উপর ভর করে আশ্রয় নিতে পারে।
  • চুন প্রয়োগের ৭ / ১০ দিন পরে গড়ে জলের প্রতি মিটার গভীরতার জন্য হেক্টর প্রতি ১৫০০ – ২১০০ কেজি (প্রতি ফুটে প্রতি বিঘায় ১০০ কেজি) মহুয়া খৈল প্রয়োগ করতে হবে।
  • মহুয়া খৈল প্রয়োগের ১০ / ১২ দিন পরে হেক্টর প্রতি ৪২০০ – ৫৫০০ কেজি (বিঘা প্রতি ৬৫০ – ৭০০ কেজি ) কাঁচা গোবর মেশাতে হবে।
  • এরও ১০ / ১২ দিন পরে ওই পুকুর বা জলাশয় মাছের চারা ছাড়ার উপযোগী হবে।

পাঙাশ মাছের চারা ও তার প্রয়োগ পদ্ধতি

  • বছর-ফেরি চারাপোনা সব থেকে ভালো। বর্ষা শেষে বা আশ্বিন – কার্তিক মাসে পোনা তৈরির বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া ভালো। ১০ – ১৫ গ্রাম ওজনের বিঘা প্রতি ৫০,০০০টি (আনুমানিক ৫৫০ – ৭০০ কেজি) বা হেক্টর প্রতি ৩৫০০০০টি চারাপোনা ছাড়তে হবে। অন্যান্য মাছের মতোই পাঙাশ মাছের বাচ্চাও বেশ স্বাস্থ্যবান, পুষ্ট, সতেজ হতে হবে। এদের মাথায় মুখের সামনে যে শুঁড় থাকে তার উজ্জ্বলতা ও অখণ্ডতা সুস্বাস্থ্যের একটা সূচক।
  • একটু একটু গরম পড়ছে। মার্চ মাসের প্রথম দিকে অর্থাৎ দোল পূর্ণিমার সময় বছর-ফেরি চারপানা পালন-পুকুরে ছাড়তে হয়।
  • নির্দিষ্ট সংখ্যার মাছ–চারা নিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা করে মৃত চারা থাকলে তাদের তুলে ফেলে সব মাছের ক্ষেত্রে যা যা করা হয় অর্থাৎ তার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ শেষে অবশ্য‌ই ৩% সাধারণ লবণ জলে বা ফরমালিন (৮ / ১০ ফোঁটা প্রতি লিটার জলে ) দ্রবণে ২ / ৩ মিনিট রেখে শোধন করতে হবে।
  • প্রখর রোদ ওঠার আগে বা পড়ন্ত বেলায় মাছের চারাগুলি আস্তে আস্তে পুকুরের জলে ছেড়ে দিতে হবে।

পরিচর্যা

  • মাছের চারা ছাড়ার পর সাধারণত কোনও রাসায়নিক সার প্রয়োগের দরকার হয় না।
  • প্রতি মাসে অবশ্যই বিঘা প্রতি ৪০ – ৫০ (৩০০ – ৩৭৫ কেজি প্রতি হেক্টর ) কেজি কলিচুন জলে গুলে ভালো করে পুকুরের জলে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • প্রতি মাসে খ্যাপলা ফেলে বা জাল টেনে মাছ পরীক্ষা করতে হবে। এতে মাছের ব্যায়াম হয়, বৃদ্ধি ভালো হয়।
  • সম্ভব হলে সপ্তাহে ২ / ১ বার জল পাল্টানো প্রয়োজন। এই সময় ২০%/৩০% ভাগ জল বের করে নতুন জল প্রবেশ করানো হয়। শীতকালে জল পাল্টানো অবশ্যই প্রয়োজন।
  • খুব ঠান্ডা এদের খুব পছন্দ নয়। এই সময় এদের খাওয়া ও চলাফেরা কমে যায়। এই সময় জলের উত্তাপ কমলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শীতে কোনও রকম জাল টানা নিষিদ্ধ — কারণ কোনও ক্ষত এদের শরীরের পক্ষে ভালো নয়, বিশেষ করে মুখের শুঁড় দু’টি খুবই সংবেদনশীল। কোনও কারণে ক্ষত হলে এদের মৃত্যু হতে পারে।

রোগ-পোকা

এই মাছে খুব বেশি রোগ-পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় না। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিন মাস বাদে বাদে মাছ তুলে নেওয়া হয়। তাই রোগে খুব ক্ষতি করতে পারে না। সুষ্ঠু পরিচর্যা ও নিয়মিত চুন প্রয়োগ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাই এই চাষের মূল মন্ত্র।

পাঙাশ মাছের সঙ্গে বিঘা প্রতি ১০০ – ১৫০টি তেলাপিয়া মাছের চাষ করা যেতে পারে। এই মাছ পুকুরকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পাঙাশ মাছের বর্জ্য পদার্থও তেলাপিয়ার খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হবে।

খাবার প্রয়োগ

  • পালন-পুকুরে মাছের চারা ছাড়ার ২ / ১ দিন পর থেকে পরিপূরক খাবার দিতে হয়। প্রথম ৭ / ১০ দিন পর্যন্ত ওদের মোট ওজনের শতকরা ৩ ভাগ খাবার সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে দিতে হয়। সারা দিনে এই সময় খাবার দেওয়া হয় এক বারই।
  • এর পর ৭ / ১০ দিন বাদ থেকে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো হয় -- ওজনের শতকরা ৫ – ৮ ভাগ পর্যন্ত খাবার প্রয়োগ করা হয়। এই খাবার আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হয়। এদের ৯০ – ৯৫ দিন বয়স পর্যন্ত এই হারেই খাবার দেওয়া হয়। এর পর মাছের গায়ে চর্বি আসা অবধি এই বৃদ্ধি চলে।
  • মেঘলা হলে বা মাছ ঠিকমতো সব খাবার না খেলে খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। তাই সব সময় দৃষ্টি রাখতে হবে কোনও রকম অস্বাভাবিক আচরণ বা গতিবিধি মাছের হচ্ছে কি না।

পরিমিত খাবার

ভাসমান খাবারই এদের খুব পছন্দ এবং এই খাবারই এরা খায়। সব থেকে ভালো খাবার পরীক্ষিত ভাসমান খাবার (বাজারে পাওয়া যায় ১ : ৩ : ১)।

মাছের ওজন ৪০০ – ৫০০ গ্রাম হলে বা চর্বি জমতে শুরু করলে বা ২ – ৩ মাস বয়সের পর থেকে সকালের খাবারে মটর সিদ্ধ (৬০%) ও বিকেলের খাবারে অল্প বাদাম খৈল (৪০%) মিশিয়ে দিলে ভালো হয়।

উন্নত উপায়ে অর্থাৎ ভালো জলে, সঠিক পরিচর্যা করে, উপযুক্ত ও সঠিক খাবার প্রয়োগ করলে মাছের গুণমান অনেক বেড়ে যায়। এদের গায়ের রং, মাংসের রং, স্বাদ ও গন্ধ ভালো হয়।

ফসল তোলা বা মাছ ধরা

মাছ তোলা এবং বাজারজাত করার সময় ও পদ্ধতির উপর মাছ চাষের লাভক্ষতি অনেক অংশেই নির্ভর করে। তাই পাঙাশ মাছ ধরার জন্য কয়েকটি কথা মনে রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ও বাজারের চাহিদার গুরুত্ব দিয়ে মাছ ধরতে হবে।

  • পাঙাশ মাছের স্থানীয় বাজারের চাহিদা যতক্ষণ মাছ জীবিত থাকে। মরা মাছের দাম অর্ধেক হয়ে যায়।
  • বছরে সাধারণত ৩ বার মাছ ধরা হয়।
  • স্থানীয় বাজারে ছোট (৪০০ – ১০০০ গ্রাম ) মাছের বেশি চাহিদা।
  • এই মাছ প্রথম ৩ – ৪ মাস ভীষণ বাড়ে। যদি মাছের সংখ্যা কমানোর প্রয়োজন না থাকে তবে মাছ ধরা স্থগিত রেখে মাছকে বাড়তে দিলে বেশি লাভ হয়।
  • গ্রীষ্মে এই মাছ বেশি বাড়ে। বৈশাখের শেষে বা জ্যৈষ্ঠ মাসে এদের ওজন ৭০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে হয়ে যায়। এই সময় সমস্ত মাছ ধরে বাজারজাত করে নতুন ভাবে আবার বছর-ফেরি চারা মাছ (১৫ গ্রাম) জ্যৈষ্ঠ মাসে ছাড়লে শ্রাবণের শেষে ৭০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে ওজনের মাছ আবার তৈরি হয়ে যাবে।
  • শ্রাবণ মাসের শেষে দ্বিতীয় ফসল বিক্রি করে একই ভাবে তৃতীয় চাষ আরম্ভ করা যায়। এর পর পরিবেশ ঠান্ডা হতে থাকে, মাছের বৃদ্ধি ভালো হয় না।
  • তৃতীয় বারের মাছ যে হেতু শীতে বেশি বাড়বে না তাই আশ্বিনের শেষে ৩০০ – ৪০০ গ্রাম ওজনের মাছের শতকরা ৬০ – ৭০ ভাগ ধরে বাজারজাত করতে হবে। ওই স্থানে শতকরা ২৫ – ৩০ ভাগ পাঙাশের চারার সঙ্গে বিঘা প্রতি ৬০০ – ৭০০ টি (৪০০০ – ৫০০০ প্রতি হেক্টরে) রুই, কাতলা (মৃগেল নয়) ছাড়া যেতে পারে।
  • ফাল্গুন মাসে গড়ে ৫০০ – ৬০০ গ্রাম হলে বিক্রয় করতে হবে। বড় মাছের স্বাদ বেড়ে যায়।
  • অনেকের বড় মাছ পছন্দ। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এদের বাড়তে দেওয়া যেতে পারে।

একাধিক বার মাছ ছাড়া ও একাধিক বার মাছ ধরা পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে একই রকম ভাবে পুকুর তৈরি করে শীত কমলে মার্চ আসে বা ফাল্গুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিঘা পিছু ৩০০০ থেকে ৫০০০ (২২০০০ – ২৩০০০ প্রতি হেক্টর) ১৫ গ্রাম ওজনের বছর-ফেরি পাঙাশ মাছের চারা সমস্ত নিয়ম মেনে ছাড়তে হয়। খাবার প্রয়োগ ও অন্যান্য পরিচর্যা একই রকম মেনে চাষ করলে মাছের ওজন ৫০০ – ৬০০ গ্রাম হয়ে যাবে ৩ মাসেই। এই বার এর থেকে প্রয়োজন বা পরিকল্পনা মাফিক মাছ তুলে নেওয়া হয়। যে সংখ্যক মাছ তুলে নেওয়া হবে সেই সংখ্যক নুতন চারা আবার সমস্ত নিয়ম নীতি মেনে প্রয়োগ করতে হবে। এর পর আবার ৩ মাস পরে মাছ তুলে ওই একই নিয়মে মাছ চারা ছাড়তে হয়। যে হেতু পাঙাশ মাছের বেশি বৃদ্ধি হয় প্রথম ৩ মাস, তাই ৩ মাস বাদে বাদে এই প্রক্রিয়া চালানোর কথা বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে সময়ের এই ফারাক কমানো যেতে পারে। পরবর্তী কালে বিভিন্ন আকারের মাছ পাওয়া যাবে। চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বয়সের ও ওজনের মাছ বাজারজাত করা এই পদ্ধতিতে সহজ হয়ে ওঠে।

সূত্র : মৎস্য বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/3/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate