মোবাইল-গভর্ন্যান্স (সংক্ষেপে এম-গভর্ন্যান্স) ই-গভর্ন্যান্সের একটি সাব ডোমেন। এটি এমন এক ধরনের ইলেকট্রনিক পরিষেবা যা মানুষ পেতে পারে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোনকে ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করে। যোগাযোগ ও সহযোগিতার জন্য অন্য প্রচলিত মাধ্যমগুলিকে এই পরিষেবার মাধ্যমে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। ভারত এবং এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে গ্রামীণ এলাকার মোবাইল পরিষেবা সস্তা এবং সহজলভ্য।
দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাই মোবাইলের মাধ্যমে নাগরিকের কাছে ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবা পৌঁছে দিতেই সরকার জোর দিচ্ছে। সরকার লক্ষ করেছে গত কয়েক বছরে মোবাইল ফোন নাগরিকদের ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে এবং নাগরিকদের একে অপরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে বৃহৎ সমাজের সঙ্গে যোগাযোগকে প্রভাবিত করতে পারছে। এই ভাবে নাগরিক-সরকার মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে মোবাইল ফোন। এই পরিষেবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এবং সরকারের কাজকর্মের দিকে আঙুল তুলতে পারে।
এম-গভর্ন্যান্সের লক্ষ্য হল মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে নাগরিকদের সরকারি পরিষেবা দ্রুত এবং সহজ ভাবে পৌঁছে দেওয়া। মোবাইল পরিষেবা যে ভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে একে ব্যবহার করে সরকার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটাতে পারে। প্রশাসনকে আরও বেশি নাগরিক-কেন্দ্রিক এবং সহজলভ্য করে তুলতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফল ভাবে নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। নাগরিকদের সময়মতো এবং সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এম-গভর্ন্যান্স সরকার এবং মানুষের মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সরকার পরিষেবা প্রদান, নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়নকে আরও উন্নত করার মাধ্যমে গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে পারে এম-গভর্ন্যান্স। বিভিন্ন সরকারি দফতরে, বিশেষ করে কৃষি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আর্থিক পরিষেবা, খুচরো ব্যবসা, ইউটিলিটি, যোগাযোগ, উৎপাদন ও পরিবহণে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারের সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মোবাইলের ব্যবহার ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষত ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ক্ষেত্রে মোবাইলের ব্যবহার বেড়েছে। মোবাইল ব্যাঙ্কিং-ই হল ভবিষ্যত। কারণ, তার কম খরচ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছনোর ক্ষমতা। তাই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রে ই-গভর্ন্যান্স থেকে এম-গভর্ন্যান্সের দিকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসেছে।
তথ্যসূত্র: পোর্টাল কটেন্ট টিম
আজ 'মোবাইল ফোন' শুধুমাত্র টেক্সট এবং ভয়েস মেসেজ পাঠানো এবং পাওয়ার জন্য একটি সরঞ্জাম হিসাবেই ব্যবহার করা হয় না। এটা শহরের ‘হ্যাভস’ এবং গ্রামের ‘হ্যাভ নটস’-এর মধ্যে যে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ রয়েছে তা জুড়তে শক্তিশালী প্রযুক্তি সেতু হিসাবে কাজ করে। ভারত মোবাইল ফোন চালু করার দুই দশকের মধ্যে, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ না থাকলেও দুরবর্তী গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে। অন্য দিকে, এটি তরুণদের জন্য কয়েক লক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি করেছে।
উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন বিভিন্ন বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দিতে পারে। যেমন, অন্য এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে একটি ডেলিভারি চ্যানেল হিসাবে একে ব্যবহার করা যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক এবং গ্রাহকদের পরিষেবা প্রদানের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করেছেন। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় গোষ্ঠী। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত সরকার মোবাইল ফোন এবং ট্যাবলেট-এর মাধ্যমে সরকারের পরিষেবা প্রদান করার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ‘মোবাইল সেবা’ চালু করেছে। সেই উদ্দেশ্যেই মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা পাওয়ার মূল পরিকাঠামোকে উন্নত করা হয়েছে। ভারতে থ্রিজি প্রযুক্তির প্রবর্তনের পর নাগরিক এখন তাঁদের মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, ইনফোটেনমেন্ট পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন।
তথ্যসূত্র: পোর্টাল কটেন্ট টিম
ভারত সরকার মোবাইল ফোনের বিস্তৃতিকে এবং বহুল ব্যবহারকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, সরকারি পরিষেবা সহজ এবং সর্বক্ষণ পাওয়ার সুবিধা দিতে একটি উন্নত বাস্তুতন্ত্রের পরিকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে। একটি কৌশল এবং তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারবিহীন নতুন মিডিয়া প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম মোবাইল ফোনের সাহায্যে নাগরিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ও পরিষেবা সরবরাহের করাই এর উদ্দেশ্য।
ভারতের যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ (ডিআইটি) তার সমস্ত বিভাগগুলির জন্য মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে পরিষেবা প্রদানের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং প্রয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। নিম্নলিখিত উদ্যোগগুলি ডিআইটি নিয়েছে :
মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নের পরিকাঠামো হিসাবে মোবাইল সার্ভিস ডেলিভারি গেটওয়ে (এমএসডিজি) তৈরি করবে সরকার, যে মূল পরিকঠামোর সহায়তায় মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
‘এক ওয়েব’ মানে হল যতটা সম্ভব ব্যবহারকারীদের কাছে একই তথ্য ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। কী ডিভাইস বা ব্রাউজার তাঁরা ব্যবহার করছেন তা এখানে গুরুত্বহীন। এর মানে হল সমস্ত সরকারি ওয়েবসাইট যাতে মোবাইলে দেখাও সহজসাধ্য হয়। তার মানে কম্পিউটারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে তথ্য ও পরিষেবা মেলে মোবাইল ব্যবহারকারীও যতটা সম্ভব সেই তথ্য ও পরিষেবা পাবেন।
তথ্যসূত্র: পোর্টাল কটেন্ট টিম
এই ভাগ করা প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনকে সাধারণ ই-গভর্ন্যান্স অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং ব্যবহারকারীকে জনপরিষেবা পৌঁছে দেবে। এমএসডিজি তৈরির উদ্দেশ্য হল সরকারের শেয়ার করা পরিকাঠামো এবং পরিষেবার দ্রুত উন্নয়ন ঘটানো। এটি বিভিন্ন গণপরিষেবাকে কম খরচে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এম গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি বিভাগে একটি সাধারণ প্লাটফর্মের মাধ্যমে কম খরচে পরিষেবা প্রদান সম্ভব হয়। সমগ্র ব্যবস্থাটিকে একটি মুক্ত মান এবং ক্লাউডভিত্তিক পরিষেবাতে উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।
সরকারি পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মোবাইলভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের নিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য এমএসডিজি নিম্নলিখিত ডেলিভারি চ্যানেলকে সহায়তা দেয়। মোবাইল-ভিত্তিক প্রযুক্তি যে হেতু ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে সে হেতু ভবিষ্যতে আরও বেশি চ্যানেল এর সঙ্গে যুক্ত হবে।
পরিপক্ক এম-গভর্ন্যান্স পরিষেবার জন্য প্রয়োজন হল নাগরিকদের লেনদেনভিত্তিক পরিষেবা প্রদান করা। এই লেনদেনভিত্তিক পরিষেবার জন্য প্রয়োজন ধাপে ধাপে ভোল বদল -- সাধারণ এসএমএস পরিষেবা থেকে থ্রিজি বা ওয়াপ ব্যবহার করে চাহিদাভিত্তিক পরিষেবা প্রদান।
এসএমএস পদ্ধতি সব চেয়ে সহজ পরিষেবা। পুশ/পুল ভিত্তিক পরিষেবার মাধ্যমে তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আনস্ট্রাকচারড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডেটা (ইউএসএসডি) একটি সময়ভিত্তিক পরিষেবা। তবে এটি এসএমএসের মতো নয়, যার কাজ তথ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং পাঠানো। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী কোনও প্রোগ্রাম চালানোর জন্য টেক্সট ভিত্তিক কমান্ড দিতে পারে।
তথ্য আদানপ্রদানের জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়, যখন ব্লুটুথ সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইস থাকে। এটি অন্য ডিভাইসে অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্সেস করতে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: পোর্টাল কটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020