ভারতে প্রায়ই ধর্ষণ হয়। এই ‘যুক্তি’ দেখিয়ে এক ভারতীয় ছাত্রের ইন্টার্নশিপ পাওয়ার আবেদন খারিজ করে দিলেন এক জার্মান অধ্যাপক। এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হওয়ায় পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি।
বিতর্কের শুরু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ই-মেল কথোপকথনকে কেন্দ্র করে। সেখানে দেখা যায় লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক আনেটে বেক সিকিঙ্গার এক ভারতীয় ছাত্রের আবেদন খারিজ করে লিখেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমি কোনও ভারতীয় ছেলেকে ইন্টার্ন হিসেবে নিই না। আমরা ভারতে ধর্ষণের সমস্যা নিয়ে প্রায়ই শুনতে পাই। এটা আমি সমর্থন করি না। কারণ , আমার অধীনে গবেষণারতদের মধ্যে অনেক মেয়ে রয়েছে।’ এর উত্তরে ভারতীয় ছাত্রটি প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, এটা মোটেই সাধারণ ভাবে সব ভারতীয় পুরুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। সেই অভিযোগ স্বীকার করে নিলেও ছাত্রটির আবেদনে সাড়া দেননি সিকিঙ্গার। তিনি লেখেন, ‘আমি মেনে নিচ্ছি যে প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা হয়তো ঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু এটাও অবিশ্বাস্য যে এত দিনের চেষ্টাতেও ভারত এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছে না।’প্রথমে কোরা এবং তার পর টুইটারে ওই ই-মেলগুলি আপলোড হওয়ার পরেই এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। ছাত্রমহল তো বটেই, কড়া প্রতিক্রিয়া দেন ভারতে জার্মান রাষ্ট্রদূত মিখায়েল স্টাইনার। তিনি সিকিঙ্গারকে মেল করে নিজের তীব্র আপত্তির কথা জানান।
ই-মেলে স্টাইনার লিখেছেন, ‘আপনার অতিসরলীকরণ এবং বৈষম্যমূলক মনোভাব শুধু ভারতে নারীমুক্তির লক্ষ্যে লড়াই করা অগণিত মানুষের অপমান নয়, লক্ষ লক্ষ ভারতীয়, যাঁরা উদার, সহিষ্ণু এবং আইন মেনে চলেন, তাঁদের প্রতিও অন্যায়।
একটা কথা আপনাকে পরিষ্কার ভাবে জানাতে চাই, ভারত ধর্ষকদের দেশ নয়।’ ভারতের বহুমুখী সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর আরও ভালো ভাবে জানার চেষ্টা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন স্টাইনার। এর পরেই ক্ষমা চেয়ে নেন সিকিঙ্গার। ভারতীয় ছাত্রদের প্রতি তাঁর নেতিবাচক মনোভাব নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। জার্মান দূতাবাসের সাইটে সিকিঙ্গারের বয়ানটি আপলোড করা হয়েছে। সেখানে নিজের ভুল স্বীকার করে ওই অধ্যাপক বলেন, ভারতীয়দের প্রতি বৈষম্যের মনোভাব থেকে তিনি ওই মন্তব্য করেননি। কাউকে আঘাত দিতেও চাননি। কোনও ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়ে থাকলে, তার জন্য তিনি ‘আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী’।
সূত্র: এই সময়, ১০ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020