সে দিনটা ছিল ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪। শান্তিনিকেতনে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের এক কর্মশালায় বিকাশপিডিয়ার কাজ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিল অধ্যাপক অমর্ত্য সেন পরিচালিত ও প্রতিষ্ঠিত প্রতীচী ট্রাস্ট। প্রায় একশো জন অংশগ্রহণকারী লিখিত ভাবে বিকাশপিডিয়া সম্পর্কে তাঁদের মতামত জানান। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছেও বিকাশপিডিয়ার মূল লক্ষ্য অফলাইনে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক সুশান্ত দত্তগুপ্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর সুকান্ত চৌধুরি, প্রতীচী ট্রাস্টের কর্মাধ্যক্ষ কুমার রাণা ও অন্তরা সেন প্রমুখ। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কাছে বিকাশপিডিয়া কেন জরুরি অনুষ্ঠানে তা ব্যাখ্যা সহকারে বলা হয়। টিম বিকাশপিডিয়ার পক্ষ থেকে সাংবাদিক স্নেহাশিস শূর বিশ্বভারতীর মালঞ্চ পিটিটিআইয়ের প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এই পোর্টালের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি সরকারি উদ্যোগ হলেও কখনওই তা একমুখী নয়। সাধারণ মানুষও প্রয়োজনমতো তাঁদের তথ্য এই পোর্টালে আপলোড করতে পারবেন। পোর্টালে সাধারণ মানুষের নিবন্ধীকরণের সুবিধা রয়েছে। গোড়ায় নিবন্ধীকরণ করে এই পোর্টালের ছ’টি বিভাগের মধ্যে যে কোনও দু’টি বিভাগে এক জন ব্যক্তি তাঁর লেখা বা মতামত দিতে পারেন। এ ছাড়াও প্রতিটি বিভাগে আলাদা করে আলোচনা মঞ্চের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেও কোনও লেখা সম্পর্কে দর্শক/লেখক তাঁর মতামত দিতে পারেন।
স্নেহাশিস শূর বলেন, সরকারি তথ্য পাওয়া, বিশেষ করে উন্নয়ন সম্পর্কে সরকারি তথ্য পাওয়া সম্পর্কে মানুষের মনে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সেই ধারণার নিরসনে বিকাশপিডিয়া একটি উপযুক্ত মাধ্যম। এর মধ্যে যাবতীয় সরকারি তথ্য দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই নয়, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন তথ্য এবং সরকারি পরিষেবা সম্পর্কে এই পোর্টালে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার স্বাধীনতার পর থেকে বহু বিষয়ে বহু পরিষেবা দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এর জন্য নানা সময়ে আইন ও প্রকল্পও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বহু মানুষ এই পরিষেবা সম্পর্কে খোঁজ রাখেন না। গরিব মানুষের জন্য তৈরি বহু প্রকল্পের কথা অনেকে জানেনই না। জানলেও প্রকল্প সম্পর্কে তাঁরা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হন। ধরা যাক, অন্ত্যদয় অন্ন যোজনা। এই প্রকল্পে এক জন সর্বোচ্চ কতটা পরিমাণে চাল বা গম পেতে পারেন তা অনেকেই জানেন না। পরিষেবা ক্ষেত্রেও মানুষের অধিকার সুনিশ্চত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও সরকারি আধিকারিক বা ক্ষমতাশালী লোক যদি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে তবে তার শাস্তির ব্যবস্থা করার কথাও আইনে বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। ফলে চোখ রাঙিয়ে বা গায়ের জোরে তাঁদের বঞ্চিত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির হাত থেকে কী ভাবে রক্ষা পাওয়া যায়, এক জন নাগরিক কোন কোন পরিষেবা বিনা খরচে পেতে পারেন তার যাবতীয় বিবরণ বিকাশপিডিয়াতে দেওয়া হয়েছে।
বিকাশপিডিয়ার আর একটি মূল উদ্দেশ্য হল গ্রামে গঞ্জে মানুষকে সাগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে তথ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। গ্রামের মানুষ বিকাশপিডিয়ার তথ্য ব্যবহার করে কৃষি বা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। বিকাশপিডিয়ার আলোচনা ফোরামে অংশ নিয়েও তাঁরা অন্যের কাছ থেকে মত গ্রহণ করতে পারেন। তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা অন্যকে জানিয়ে অসংখ্য মানুষের উপকার করারও ব্যবস্থা করেছে বিকাশপিডিয়া।
স্নেহাশিস শূর বলেন, বিকাশপিডিয়া কেন্দ্রীয় তথ্য কারিগরি দফতরের একটি প্রকল্প। সর্বভারতীয় স্তরে সি-ড্যাক এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব পেয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় পোর্টালটি করার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সংস্থা এটির স্টেট নোডাল এজেন্সি হিসাবে কাজ করছে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলার জন্য আইআইআইএমকে নোডাল এজেন্সি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। তারা চেষ্টা করছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা অন্যান্য বিশিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পোর্টালটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জ্ঞানভাণ্ডার হিসাবে গড়ে তুলতে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/21/2019