মানব সভ্যতা যখন কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিকে হাতে পায়, তখন প্রথম দিকে এর ব্যবহার বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা ও অঙ্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যেমন সভ্যতার বিবর্তন হয়েছে, আবিষ্কৃত হয়েছে উন্নততর প্রযুক্তি, ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়েছে তার প্রয়োগ, তেমনি কম্পিউটারের ব্যবহারও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। পরবর্তী অংশে কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপ ও গবেষণা সংক্রান্ত মূল্যবান তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কম্পিউটার ব্যবহারের আধুনিক প্রণালীর সাহায্যে সেগুলিকে বিশ্লেষণও করা হচ্ছে। এমনকী, কোনও বিষয় নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সে সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আগে যে সব গবেষণা হয়েছে, সেগুলির তথ্যও আমরা কম্পিউটার থেকে পেতে পারি। অর্থাৎ, গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্যের এক বিরাট ভাণ্ডারকে আমাদের সামনে হাজির করেছে কম্পিউটার।
কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিবহনে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেমন রেল, বাস, বিমান। কোন আসন ফাঁকা আছে বা যিনি আসন সংরক্ষণ করতে চান, তাঁর প্রয়োজনের আসনটি ফাঁকা আছে কি না, কম্পিউটারের সাহায্যে তা জানা যায় খুব সহজে। বাস্তবে কম্পিউটার কার্যক্রম (নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ব জুড়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি।
আজকাল কম্পিউটারের সাহায্যে ভোগ্যপণ্য থেকে শেয়ার, সিনেমার টিকিট থেকে বিমানের টিকিট সব কিছুরই বেচা-কেনা হচ্ছে। কম্পিউটারের পরিভাষায় একে বলা হয় ই-কমার্স। মূলত, ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বেচা-কেনার কাজ হয়।
কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন বস্তুর নকশা তৈরি করা যায়। কম্পিউটারের মাধ্যমে যেমন লেখার কাজ হয়, তেমনি ছবি আঁকার কাজও হয়। তাই কম্পিউটারে কোনও কিছুর নকশা তৈরির পাশাপাশি ইচ্ছেমতো তার বিন্যাসও ঘটানো যায়। যেমন ক্যামেরায় তোলা বা হাতে আঁকা কোনও ছবিকে ছোট বা বড় করা যায়, কিংবা তার আকৃতির অন্য কোনও রকম পরিবর্তন ঘটানো যায়। বর্তমানে উন্নত মানের অ্যানিমেশন ফিল্ম বা চলমান কার্টুন ছবি তৈরির কাজেও কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার অভাবনীয় উন্নতির সূচনা করেছে।
ব্যাঙ্কেও এখন কম্পিউটার চালু করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক লেনদনের বেশির ভাগ কাজই বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে করা হয়ে থাকে।
যে কোনও দেশেই প্রতিরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটির ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য কম্পিউটারেই নিরাপদে রাখা যায় নির্দিষ্ট সাঙ্কেতিক নামের (password) আড়ালে। এমনকী আজকাল এমন অনেক আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে, যাদের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে কম্পিউটারে, এমনকী এই সব যুদ্ধাস্ত্রকে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে কম্পিউটারের সাহায্যেই। অর্থাৎ, তাদের প্রয়োগ করতে হলে চোখ রাখতে হবে কম্পিউটারের পর্দায়, আর হাতে নিতে হবে কম্পিউটারের কি বোর্ড এবং মাউস।
মুদ্রণ মাধ্যম ও বৈদ্যুতিন মাধ্যম উভয় ক্ষেত্রেই এখন কম্পিউটারের জন্য অবারিত দ্বার। মুদ্রণ মাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রতিবেদন তৈরি করা, ছবির মাপ ঠিক করা, পাতা সাজানো কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে যে কোনও ধরনের অনুষ্ঠান তৈরি ও তার সম্প্রচারের কাজ হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।
দক্ষতার সঙ্গে প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্যও আজকাল কম্পিটারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই সরকারি কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার এখন অনেক বেড়ে গেছে। দেশে দেশে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে কাজের সমন্বয় বাড়াতে যেমন কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনই দফতরগুলি তাদের কাজকর্ম সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতেও তথ্য সংরক্ষণ সহ কম্পিউটারকে নানা ভাবে কাজে লাগাচ্ছে।
সূত্র : কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, আই আই আই এম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/21/2020