ম্যাথুর গস্পেলের সেই তিন ‘মেজাই’ বা জ্ঞানী ব্যক্তির কাহিনি মনে আছে তো ? যিশু জন্মানোর খবর পেয়ে যাঁরা এসেছিলেন বেথলেহেমে, সদ্যোজাত যিশুকে দেখতে, যাঁদের সঙ্গে ছিল নবজাতকের জন্য নানা উপহার। তাঁরা ছিলেন তিন রাজা, তখনকার তিন মহাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপের প্রতিনিধি। তাঁরা ছিলেন মানুষের তিন বয়সের প্রতীক --- যৌবন, মধ্যবয়স এবং বার্ধক্য। তাঁদের নাম ছিল বালথাসার, গ্যাস্পার ও মেলশিওর। একশো তিরিশ বছর পর প্রাচ্যের সেই তিন জ্ঞানী ব্যক্তির পুনর্মিলন হচ্ছে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট-এ। রক্তমাংসে নয়, ছবিতে। ওয়াশিংটনের এই গ্যালারিতে ওই তিন ছবির প্রদর্শনী চলবে ১৭ মার্চ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত। ছবি তিনটি এঁকেছিলেন বারোক ধারার অন্যতম সেরা শিল্পী বেলজিয়ামের পিটার পল রুবেন্স (১৫৭৭ -১৬৪০)।
রুবেন্স তাঁর শৈশবের বন্ধু বালথাসার মোরেটাসের জন্য ছবিগুলি এঁকেছিলেন। বালথাসারের আরও দুই ভাই ছিল, নাম গ্যাস্পার ও মেলশিওর। মেজাইদের নামানুসারেই তাঁদের নাম ছিল। এই তিন জনের আবক্ষ ছবি রুবেনস আঁকেন ১৬১৮ সালে। রুবেন্স তিন ভাইয়ের ছবি এঁকে সেগুলির নামকরণ করেন প্রাচ্যের তিন জ্ঞানীর নামে। কিন্তু ১৮৮১ সালে প্যারিসের এক নিলামে এই তিন তৈলচিত্রের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বালথাসার-এর বর্তমান মালিক বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পের মিউজিয়াম প্ল্যান্টিন মোরেটাস। গ্যাস্পার-এর ডেরা হল পুয়ের্তোরিকোর সান জুয়ানের একটি মিউজিয়াম। আর মেলশিওর ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল গ্যালারিরই বাসিন্দা।
রুবেনস যখন এই ছবিগুলি আঁকার বরাত পান তখন বালথাসার (১৫৭৪ -১৬৪১) ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের বৃহত্তম ছাপাখানা, প্ল্যান্টিন প্রেসের সর্বময় কর্তা ছিলেন। ন্যাশনাল গ্যালারির ডিরেক্টর আর্ল পাওয়েল (তৃতীয়) বলেছেন, সেই সময় ‘মেজাই ’দের সম্মানে অনেকেই ছবি এঁকেছিলেন, কিন্তু রুবেন্সের ছবিগুলি প্রচলিত ধারার থেকে আলাদা।
প্রতিকৃতি ও নিসর্গচিত্র আঁকায় রুবেন্স ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর আঁকা কয়েকটি বিখ্যাত ছবি হল, ‘গার্ডেন অফ লাভ’, ‘স্যামসন অ্যান্ড ডিলাইলা’, ‘প্রমিথিউস বাউন্ড’ ও ‘পার্সিউস অ্যান্ড অ্যান্ড্রোমিডা’, ‘দ্য ড্রাংকেন হারকিউলিস’, ‘ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস’, ‘ভেনাস অ্যাট এ মিরর’, ‘ভেনাস অ্যাট হার টয়লেট’, ‘দ্য ক্রুসিফাইড খ্রিস্ট’, ‘দ্য ফল অফ ম্যান’ ইত্যাদি।
সূত্র : এই সময়, ১৯ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020