বাংলালাইভ : এ বারের বইমেলায় স্টল কতগুলো থাকছে ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : সবমিলিয়ে সাড়ে সাতশো | বই...লিটল ম্যাগাজিন...সব কিছু নিয়ে |
বাংলালাইভ : ময়দানের তুলনায় মিলনমেলার বইমেলা কি সফল ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : দেখুন‚ সাফল্য তো ওইভাবে বিচার করা যাবে না | তবে এটুকু বলতে পারি‚ দুটো মেলার চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা |
বাংলালাইভ : কীরকম ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : প্রথমত বলব‚ আগের থেকে ধুলো এখন অনেক কম | বইমেলা এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন |
বাংলালাইভ : শুধু এটাই ...?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : বলছি | আমি শেষ করিনি এখনও | হ্যাঁ‚ একটা কথা স্বীকার করতেই হবে‚ ময়দানে যাতায়াত করা অনেক সহজ | কিন্তু এটাও দেখুন‚ বাইপাসের মিলনমেলাকে কিন্তু পুরোপুরি আউটস্কার্ট ভেন্যু বলা যায় না | কলকাতা কিন্তু এখন পূর্ব দিকে বাড়ছে | সেদিক দিয়ে দেখলে‚ ধীরে ধীরে ই এম বাইপাসও একদিন শহরের কেন্দ্রস্থল হবে |
বাংলালাইভ : কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে কোন বইমেলা সফল? ময়দান‚ নাকি বাইপাস?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : একটা পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে | ময়দানে শেষ বইমেলা হয়েছিল ২০০৬-এ | এসেছিলেন ২৪ লক্ষ মানুষ | বই বিক্রি হয়েছিল ১২ কোটি টাকার | আর গত বছর‚ বইমেলায় এসেছিলেন ২০ লক্ষ মানুষ | বিক্রি হয়েছিল ২০ কোটি টাকার বই |
বাংলালাইভ : তাহলে মানুষ কি আগের থেকে বেশি বই কিনছেন ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : আমি বলতে চাইছি‚ আগে একজন মানুষ চারবার গিয়ে একবার বই কিনতেন | এখন একজন একবার গিয়েই বই কিনছেন |
বাংলালাইভ : তাহলে ? ফুটফল তো ময়দানেই বেশি হত ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : সে তো হবেই | যাতায়াতের সুবিধের জন্য অনেকেই একাধিকবার যেতেন | কিন্তু ময়দানে আসছেন প্রকৃত বইপ্রেমীরা | আগে বই ছাড়াও আড্ডা দেওয়া‚ প্রেম করা...বই মেলায় আসার নানা উদ্দেশ্য ছিল | আমরা তার বিরোধী নই | কিন্তু সেইসঙ্গে বলতে চাই‚ বইমেলায় প্রকৃত পুস্তকপ্রেমীদের আগমন অনেক বেড়েছে |
বাংলালাইভ : কিন্তু বইমেলায় বই-এর বিক্রি কি বেড়েছে ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : বই কিন্তু বিক্রি হয় | যে সংখ্যায় মানুষ বেড়েছে‚ যে গতিতে শিক্ষাহার বেড়েছে‚ সেই হারে বই বিক্রি বেড়েছে কি না‚ সেটা গবেষণাধর্মী এবং বিচার্য বিষয় | তবে‚ বই বিক্রির দিক দিয়ে‚ বইমেলাকে কিন্তু এখন আগের থেকে অনেক কিছুর সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে |
বাংলালাইভ : ইন্টারনেট ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : অবশ্যই | একে তো ইন্টারনেটের দৌলতে ইনফরমেটিভ বই-এর চাহিদা এবং বিক্রি খুব কমে গেছে | রইল বাকি সাহিত্য | সেখানেও আছে ই বুক এবং ই কমার্স | এদের সবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে বইমেলাকে |
বাংলালাইভ : কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে বইমেলার প্রচারও তো এখন অনেক যুগোপযোগী ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : হ্যাঁ সেটাও ঠিক | নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে অ্যাপস করা হয়েছে | আছে ঝকঝকে ওয়েবসাইট | আমরা বলছি‚ 'টেক স্যাভি' বুক ফেয়ার |
বাংলালাইভ : কিন্তু ডিসকাউন্ট তো সেই ১০ শতাংশই থাকবে ? কলেজ স্ট্রিটে গেলে তো এর থেকে বেশি পাওয়া যাবে | তাহলে কি বইমেলা শুধু গ্রন্থ তালিকা নেওয়ার জন্য আর বই কেনার জন্য কলেজ স্ট্রিট ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : এত রকমের বই একসঙ্গে বইমেলা ছাড়া অন্য কোথাও পাবেন ? কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে বই কেনার সময় কিন্তু সবসময় এখন পাওয়াও যায় না | তাই‚ যাঁরা সত্যি বই ভালবাসেন‚ তাঁরা বই হাতে নিয়ে দেখতে বইমেলায় আসবেনই | আর কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গে বইমেলার ডিসকাউন্টের পার্থক্য তো প্রথম থেকেই আছে | নতুন করে ভেবে তো আর লাভ নেই | তবে এ বার কিন্তু বইমেলায় ১৫ % ছাড়ের সুযোগও থাকছে |
বাংলালাইভ : সেটা কীভাবে?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : CESC-র সঙ্গে সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে | জানুয়ারি মাসের বিল সঙ্গে থাকলে ১৫% ছাড় পাওয়া যাবে |
বাংলালাইভ : CESC তো শুধু কলকাতায় | বই পড়ায় তো কলকাতাকে টেক্কা দেবে অন্য জেলা | আর কলকাতা সংলগ্ন জেলা থেকেও বহু মানুষ বইমেলায় আসেন |
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : এটা তো প্রথম বার হচ্ছে | আমাদের ভাবনা চিন্তায় আছে‚ আগামী বছর থেকে যদি WBSEB-র সঙ্গে এরকম কোনও চুক্তি করা যায়...
বাংলালাইভ : ৩৯ তম কলকাতা বইমেলাকে আরও আকর্ষণীয় করতে আর কী উদ্যোগ নিচ্ছেন ?
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় : এ বারেও প্রবেশ অবাধ | থাকছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিশ্রুত পানীয় জলের পাউচ | আর সবথেকে বড় যে সমস্যা‚ সেই যাতায়াত নিয়েও অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে | থাকছে শুধু বইমেলার জন্য নির্দিষ্ট বাস | দেখা হবে‚ রাত হয়ে গেলেও যাতে দূর দূরান্ত থেকে আসা বইপ্রেমীদের বাড়ি ফিরতে অসুবিধে না হয় | সব মিলিয়ে‚ এ বারেও সফল হবে কলকাতা বইমেলা‚ যা কি না বইপ্রেমী-সমাগমের নিরিখে এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা |
সুত্রঃ banglalive.com
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020