আকার |
১৭০,০০০ জওয়ান ১,৯১৫ বিমান (তন্মধ্যে ৭৬০টি যুদ্ধবিমান ও ৩৮৮টি ইউভিএস) |
|
অংশীদার |
ভারতের সামরিক বাহিনী |
|
সদর |
নতুন দিল্লি |
|
নীতিবাক্য |
সংস্কৃত: নভ স্পর্শং দীপ্তম্ |
|
রং |
গাঢ় নীল, আকাশী এবং সাদা |
|
Aircraft flown |
||
আক্রমণ |
জাগুআর আই এস, মিগ-২১, মিগ-২৭ |
|
বৈদ্যুতিক যুদ্ধ |
আইএআই ফ্যাল্কন |
|
জঙ্গী বিমান |
সুখোই এসইউ-৩০ এমকেআই, দাসল্ট মিরাজ ২০০০, মিগ-২১ |
|
হেলিকপ্টার |
ধ্রুব, চেতক, চিতা, Mi-8/Mi-17, Mi-26, Mil Mi-24 |
|
গোয়েন্দা বিমান |
গাল্ফস্ট্রীম ৪ |
|
পরিবহন বিমান |
Il-76 MD, এএন ৩২, HS-748, Boeing 707, Boeing 737 |
ভারতীয় বিমানবাহিনী বা ভারতীয় বায়ুসেনা (হিন্দি: भारतीय वायु सेना, Bhartiya Vāyu Senā; ইংরেজি: Indian Air Force বা IAF) ভারতের সামরিক বাহিনীর বৈমানিক শাখা। এই বাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হল ভারতের আকাশপথ সুরক্ষিত রাখা ও আকাশে সংঘটিত যুদ্ধ পরিচালনা করা।
১৯৩২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের সহায়ক বিমানবাহিনীরূপে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ বাহিনীর নামের সঙ্গে রয়্যাল উপসর্গটি যুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে যুক্তরাজ্যের অধীনতাপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স ভারতীয় সংঘের অধীনস্থ হয়। ১৯৫০ সালে ভারত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষিত হলে রয়্যাল উপসর্গটি বর্জন করা হয়। স্বাধীনতার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে চারটি ও চীনের সঙ্গে একটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এছাড়া যে অভিযানগুলিতে বায়ুসেনা অংশগ্রহণ করেছে সেগুলি হল গোয়া আক্রমণ, অপারেশন মেঘদূত ও অপারেশন ক্যাকটাস।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বায়ুসেনার সর্বাধিনায়ক। এয়ার চিফ মার্শাল পদের অফিসার বায়ুসেনাপ্রধান বিমানবাহিনীকে পরিচালিত করেন। সাধারণত একই সময় এক জন বায়ুসেনাপ্রধানই নিযুক্ত থাকেন। একজন মাত্র অফিসার অদ্যাবধি পাঁচ-তারা মার্শাল অফ দ্য এয়ার ফোর্স পদে উন্নীত হয়েছেন।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মীসংখ্যা ১৭০,০০০; ১,১৩০টি কমব্যাট ও ১,৭০০টি নন-কমব্যাট এয়ারক্র্যাক্ট বর্তমানে সক্রিয় আছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিমানবাহিনী। সাম্প্রতিককালে ভারতীয় বিমানবাহিনী একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিবর্ধন ও আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে সোভিয়েত জমানার ফাইটার জেটগুলি বাতিল করা হচ্ছে। পরিবর্ধন প্রক্রিয়ায় ভারতীয় এমআরসিএ কর্মসূচির অধীনে বায়ুসেনা ১২৬টি নতুন ফাইটার জেট কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদের অর্থমূল্য ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
লক্ষ্য
১৯৪৭ সালে সশস্ত্র বাহিনী আইন, ভারতের সংবিধান ও ১৯৫০ সালের বায়ুসেনা আইন অনুসারে আকাশযুদ্ধে বায়ুসেনার লক্ষ্য হল: প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি তথা ঐ জাতীয় সকল পদক্ষেপ সহ ভারত ও তাহার প্রত্যেক অংশের প্রতিরক্ষা যুদ্ধের প্রারম্ভকাল হইতে যুদ্ধকাল ও যুদ্ধসমাপ্তি-উত্তর কালে শান্তিপ্রতিষ্ঠা পর্যন্ত পরিচালনা করা। এছাড়াও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অন্যান্য শাখার ন্যায় বায়ুসেনাও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে সহায়তা করতে পারে।
ইতিহাস
মূল নিবন্ধ: ভারতীয় বিমানবাহিনীর ইতিহাস
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রথম যুগের এয়ারক্র্যাফটগুলির একটি।
১৯৩২ সালের ভারতীয় বিমানবাহিনী আইন বলে এই বছর অক্টোবর রয়্যাল এয়ারফোর্সের সহকারী বিমানবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় বিমানবাহিনী। ১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিল চারটি ওয়েস্টল্যান্ড ওয়াপিটি বাইপ্লেন ও পাঁচজন ভারতীয় পাইলট সহ ভারতীয় বিমানবাহিনী নং ১ স্কোয়াড্রন নামক বাহিনীর প্রথম স্কোয়াড্রনটিকে নিযুক্ত করে। ভারতীয় পাইলটদের নেতৃত্ব দেন ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট (পরবর্তীকালে এয়ার চিফ মার্শাল) স্যার সিসিল বসিয়ার। ১৯৩৮ সালের পূর্বাবধি নং ১ স্কোয়াড্রন ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর একমাত্র স্কোয়াড্রন। যদিও দুটি ফ্লাইট সংযুক্ত হয়েছিল বাহিনীর সঙ্গে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৩ সালে স্কোয়াড্রনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত এবং ১৯৪৫ সালে এই সংখ্যা হয় আট। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি রূপে রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৪৫ সালে এই বিমানবাহিনীকে রয়্যাল বা রাজকীয় উপাধিটি দান করেন।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স দ্বিধাবিভক্ত হয়। বাহিনীর দশটি অপারেশনাল স্কোয়াড্রনের মধ্যে পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে অবস্থিত তিনটি রয়্যাল পাকিস্তান এয়ারফোর্সের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
১৯৪৭ সালে দেশীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হলে কাশ্মীরের মহারাজা সামরিক সাহায্যলাভের আশায় ভারতে যোগ দেন। সংযোজন-সাধনপত্র সাক্ষরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় বিমানবাহিনী অবিলম্বে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়। এর ফলে ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা ঘটে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনোরূপ যুদ্ধঘোষণা করা হয়নি। যুদ্ধকালে ভারতীয় বিমানবাহিনী রয়্যাল পাকিস্তান এয়ারফোর্সের সঙ্গে আকাশযুদ্ধে লিপ্ত না হলেও ভারতীয় বাহিনীকে পরিবহণ সহায়তা সহ বিশেষ বৈমানিক সাহায্য দান করেছিল। ১৯৫০ সালে ভারত প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর নাম থেকে রয়্যাল উপসর্গটি বর্জন করা হয়।
১৯৬০ সালে কঙ্গোয় বেলজিয়ামের ৭৫ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের সহসা সমাপ্তি ঘটলে দেশ জুড়ে দাঙ্গা ও বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ারক্র্যাফট এই সময় কঙ্গোয় জাতিসংঘের অপারেশনকে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত হয় এবং নভেম্বরে অপারেশনাল মিশনে হাত দেয়। ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘের মিশন শেষ হওয়া পর্যন্ত বিমানবাহিনীর ইউনিটটি সেখানেই থাকে।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধে অতর্কিত হানার প্রস্তুতিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী ফল্যান্ড ন্যাট; এর ডাকনাম ছিল স্যাব্রে স্লেয়ার এবং এটি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ-৮৬গুলি ধ্বংসের কাজে নিযুক্ত ছিল।
১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীগণ কার্যকরীভাবে অনুপ্রবেশকারী চীন বাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় বিমানবাহিনীকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন। তিন বছর বাদে ১৯৬৫ সালে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই সময় পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রথম কোনো শত্রুবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রত্যক্ষ আকাশযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিবিড় সহায়তা দানের বদলে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বেসগুলিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী স্বাধীনভাবে রেড চালায়। এই বেসগুলি পাকিস্তানি সীমার অনেক ভিতরে অবস্থিত ছিল। তাই এই রেড চালানোর ফলে ভারতীয় বিমানবাহিনী বিমান-বিধ্বংসী গুলিচালনার বিরুদ্ধে নিজ দক্ষতার বিশেষ পরিচয় রাখে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর সামরিক সরঞ্জামগুলি ভারতীয় বিমানবাহিনীর তুলনায় গুণগত মানের বিচারে অনেক উন্নত ছিল। কারণ ভারতীয় বিমানবাহিনীর ফ্লিটের অধিকাংশ জেটই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন। তা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠালাভ করে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় পাকিস্তান দাবি করেছিল যে তারা ১১৩টি ভারতীয় বিমানবাহিনী এয়ারক্র্যাফট গুলি করে নামিয়েছে। অন্যদিকে ভারত দাবি করে যে তারা ৭৩টি পাকিস্তান বিমানবাহিনী এয়ারক্র্যাফট গুলি করে নামায়। কলাইকুন্ডা ও পাঠানকোটের বিধ্বংসী যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৬০% ক্ষতি সাধিত হয়। যেখানে অধিকাংশ ক্ষতিই স্থলে সাধিত হয়েছিল।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর ভারতীয় বিমানবাহিনীতে ব্যাপক রদবদল করা হয়। ১৯৬৬ সালে সৃষ্টি করা হয় প্যারা কম্যান্ডো। রসদ সরবরাহ বৃদ্ধি ও উদ্ধারকার্যে গতি আনার উদ্দেশ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনী ৭২টি অ্যাভ্রো ৭৪৮ বাহিনীতে সংযোজিত করে। অ্যাভ্রোর লাইসেন্সের অধীনে এগুলি নির্মাণ করেছিল হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস (এইচএএল)। ফাইটার এয়ারক্র্যাফটের দেশজ উৎপাদনে অধিক গুরুত্ব আরোপ করে ভারত। বিখ্যাত জার্মান এয়ারোস্পেস ডিজাইনার কার্ট ট্যাঙ্ক অঙ্কিত নকশায় নির্মিত এইচএএল এইচএফ-২৪ মারুত ভারতীয় বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয়। এইচএএল অজিত নামে পরিচিত ফল্যান্ড ন্যাটের একটি উন্নততর সংস্করণ নির্মাণের কাজে হাত দেয় এইচএএল। একই সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয় ম্যাক ২ গতিসম্পন্ন সোভিয়েত মিগ-২১ ও সুখোই সু-৭ ফাইটারগুলি।
ভারতীয় বিমানবাহিনী সি-১১৯ এয়ারক্র্যাফট ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইলে ভারতীয় প্যারাট্রুপারদের নামাচ্ছে, ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
১৯৭১ সালের শেষদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুনরায় যুদ্ধ বাধে। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর, পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর দশ দিন আগে আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর অবস্থান আক্রমণ করে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ-৬৪ স্যাব্রে জেটগুলি। বয়রার যুদ্ধে চারটি পাকিস্তানি স্যাব্রেকে গুলি করে নামায় ভারতীয় ফল্যান্ড ন্যাটগুলি। ৩ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে শ্রীনগর, আম্বালা, সিরসা, হালওয়াড়া ও যোধপুরে বিমানবাহিনীর স্থাপনার উপর পাকিস্তান বিমানবাহিনী অপারেশন চেঙ্গিজ খান নামে কয়েকটি প্রাকযুদ্ধ হানা চালায়। কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনীর সুচতুর কৌশলের কাছে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং ক্ষয়ক্ষতিও প্রায় কিছুই ঘটে না। ভারতীয় বিমানবাহিনী অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামূলক সর্টির দ্বারা বিমান হানার জবাব দেয়। প্রথম দুই সপ্তাহে ভারতীয় বিমানবাহিনী ২,০০০ সর্টি পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তান অপারেশন চালাতে বিশেষ বৈমানিক সহায়তা দান করে। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে পাকিস্তান নৌবাহিনী ও মেরিটাইম সিকিউরিটি এজেন্সির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে ভারতীয় নৌবাহিনীকেও সাহায্য করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। পশ্চিমের ফ্রন্টে লঙ্গেওয়ালার যুদ্ধে ভারতীয় বিমানবাহিনী ২৯টি পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক, ৪০টি সশস্ত্র জওয়ানবাহী যান ও একটি ট্রেন ধ্বংস করে। এছাড়া বিমানবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানের করাচির তৈলক্ষেত্র, মঙ্গলা বাঁধ ও সিন্ধুপ্রদেশের একটি গ্যাসক্ষেত্রে বিমানহানা চালায়।. একই রণকৌশল প্রয়োগ করে পূর্বের ফ্রন্টেও ভারতীয় বিমানবাহিনী চূড়ান্ত বৈমানিক সাফল্য লাভ করে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি, সড়কপথ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণকালে ভারতীয় বিমানবাহিনী দাবি করেছিল ৫৪টি এফ-৮৬ স্যাব্রে সহ ৯৪টি পাকিস্তান বিমানবাহিনী এয়ারক্র্যাফট তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পরিবহণ এয়ারক্র্যাফট ও হেলিকপ্টার সহ ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রায় ৬,০০০ সর্টি পূর্ব ও পশ্চিম রণাঙ্গনে উড়িয়েছিল। যুদ্ধের শেষ লগ্নে ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে আকাশ থেকে লিফলেট ছড়ায়।
১৯৮৪ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে সিয়াচেন হিমবাহ দখলের উদ্দেশ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনী অপারেশন মেঘদূত পরিচালনা করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এমআই-৮, চেতক ও চিতা নামের তিনটি হেলিকপ্টার শত শত ভারতীয় সেনাকে সিয়াচেনে নিয়ে যায়। ১৯৮৪ সালের ১৩ এপ্রিলের এই সামরিক অভিযান সিয়াচেনের প্রতিকূল পরিবেশ ও আবহাওয়ার কারণেই অন্য সকল অভিযান থেকে এর স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে। অভিযান সফল হয়েছিল। কারণ পূর্বতন একটি চুক্তির ফলে এই অঞ্চলে ভারত বা পাকিস্তান কোনো দেশেরই সেনা-জওয়ান মোতায়েন ছিল না। বিনা বাধায় ভারত হিমবাহের অধিকাংশ স্থানে নিজের আধিপত্য স্থাপন করে।
১৯৯৯ সালের ২০ মে কার্গিল যুদ্ধ চলাকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীকে ডাকা হয়। কাশ্মীরের উচ্চতা ও প্রতিকূল ভূমিরূপের কারণে বিমানবাহিনী প্রথমে শ্লথগতির মিল এমআই-৮/১৭ হেলিকপ্টার ব্যবহারের ব্যাপারে নিজ সীমাবদ্ধতার কথা জানায়। উল্লেখ্য এই হেলিকপ্টার ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় কাজ করতে পারত। এই সীমাবদ্ধতার কথা প্রমাণিত হয়ে যায় যখন পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় বিমানবাহিনী এমআই-৮ হেলিকপ্টার ও মিগ-২১ ও মিগ-২৭ নামে দুটি জেটকে গুলি করে নামায়। বলা হয়েছিল, এগুলি পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে। এই প্রাথমিক ব্যর্থতার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী মিরেজ ২০০০ নিয়োগ করে। এটি মিগের তুলনায় উন্নততর সামরিক সরঞ্জামই শুধু ছিল না, বরং রাতেও বিমান হানা চালানোর ক্ষমতা রাখত। মিরেজগুলি সফলভাবে কার্গিলে শত্রুশিবির ও রসদ ক্যাম্পে হানা দেয় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই শত্রুদের সরবরাহ ব্যবস্থাটিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে সক্ষম হয়। র্যাডার ও মিগ-২৯ বিমানের সাহায্যে বিমানবাহিনী সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখে। মিগ-২৯গুলি মিরেজ ২০০০-এর এসকর্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধের সময় বিমানবাহিনী প্রতিদিন ৪০টির বেশি সর্টি কার্গিল অঞ্চলে আনা-নেওয়া করত। কার্গিলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অপারেশন শুধুমাত্র ভারতীয় জওয়ানদের মনোবলই চাঙ্গা করে না, তা মুন্থো ঢালো ও টাইগার হিল পুনর্দখলের পথও প্রস্তুত করে। ২৬ জুলাই ভারতীয় বাহিনী সফলভাবে কার্গিলকে পাকিস্তানি ফৌজ ও ইসলামি জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত করে। ১৯৯৯ সালের ১০ অক্টোবর স্যার ক্রিক অঞ্চলের উপর দিয়ে ওড়ার সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ-২১গুলির সঙ্গে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ব্রেগেট আটলান্টিক-এর সংঘর্ষ বাধে। আটলান্টিক ঘটনা নামে পরিচিত এই সংঘর্ষে ষোলোজন পাকিস্তানি নৌবাহিনীর জওয়ানকে বোর্ডেই হত্যা করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ভারত দাবি করেছিল আটলান্টিক ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষারক্ষা সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত ছিল। পাকিস্তান অবশ্য এই দাবি অস্বীকার করে জানায় ওই নিরস্ত্র এয়ারক্র্যাফটটি ট্রেনিং মিশনে গিয়েছিল।
১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ থেকেই ভারতীয় বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়। এই বাহিনীকে নতুন শতাব্দীর উপযুক্ত করে তোলার কাজও শুরু হয়। পুরনো এয়ারক্র্যাফটগুলি বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবাহিনীর ফ্লিটের সংখ্যাও কমিয়ে ফেলা হয়। তাসত্ত্বেও ভারতীয় বিমানবাহিনী বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিমানবাহিনী। নতুন এয়ারক্র্যাফট সংযোজনের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর আকারও এরপর বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রনের সংখ্যা ৪২ করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
গঠন
কমান্ড
ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাঁচটি পরিচালনাগত এবং দুই কার্মিক কমান্ডে বিভক্ত।
পরিচালনাগত কমান্ড
কমান্ড |
সদর দফতর |
ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড |
নতুন দিল্লি |
সেন্ট্রাল এয়ার কমান্ড |
এলাহাবাদ |
ইস্টার্ন এয়ার কমান্ড |
শিলং |
দক্ষিণ পশ্চিম এয়ার কমান্ড |
গান্ধিনগর |
দক্ষিন এয়ার কমান্ড |
তিরুবনন্তপুরম |
স্কোয়াড্রন এবং ইউনিট
একটি উড়ন্ত স্কোয়াড্রন বা ইউনিট , বিমানবাহিনী স্টেশনের একটি সাব - ইউনিট হয় যা আইএএফ প্রধান কাজ সম্পন্ন করে । একটি জঙ্গী স্কোয়াড্রন বিমানবাহিনীর ১৮টি বিমান নিয়ে গঠিত হয় ; সব ফাইটার স্কোয়াড্রনে উইং কমান্ডার পদমর্যাদার এক কমান্ডিং অফিসার নেতৃত্বে থাকেন । কিছু পরিবহন স্কোয়াড্রন এবং হেলিকপ্টার ইউনিটের ক্ষেত্রে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার এক কমান্ডিং অফিসার নেতৃত্বে থাকেন ।
বিমান সম্ভার
তথ্য সংকলন : উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/11/2020