ব্রেন ক্যানসার আসলে কী ? স্বপ্নের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগই বা কতটা ? কেমন করে বুঝব, কে অটিস্টিক আর কে-ই বা মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের শিকার ? মঙ্গলবার দুপুরে এমনই সব প্রশ্ন ভেসে এল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ থেকে। প্রশ্নকর্তা এক ঝাঁক স্কুলপড়ুয়া। আর উত্তরদাতা? তারাও পড়ুয়া। প্রেসিডেন্সির বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস, সমাজবিজ্ঞান আর পদার্থবিদ্যার ছাত্রছাত্রী। এই প্রশ্নোত্তর পর্ব ‘ব্রেন ফেয়ার’-এর সৌজন্যে। প্রেসিডেন্সি আয়োজিত মস্তিষ্ক সচেতনতা সপ্তাহের (ব্রেন অ্যাওয়ারনেস উইক) অংশ হিসেবেই এ দিন ছিল এই অভিনব মেলা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানান, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মস্তিষ্ক সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যই এই আয়োজন। আমাদের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন মনোবিকাশ কেন্দ্রের শিশুরাও। যাঁদের অনেকেই নানা ব্রেন ডিজঅর্ডারের শিকার।’‘বরফি’র ঝিমলি চট্টোপাধ্যায়কে মনে আছে ? দার্জিলিংয়ের অভিজাত পরিবারের মেয়েটার অটিজম ছিল বলে, তাঁর মা-বাবা তাঁকে প্রকাশ্যে আনতে লজ্জা পেতেন। পরিচিতরা অনেকেই তাঁকে অবলীলায় ‘পাগল’ বলে মুখ টিপে হাসতেন। ঝিমলির জীবনে অবশ্য এসেছিল বরফি। কিন্তু সেলুলয়েডের ‘বরফি’ তো বাস্তবে আসে না। তাই মানুষের চালিকাশক্তি মস্তিষ্কের নানা অলিগলি থাকে অধরাই। বিশিষ্ট বায়োলজিস্ট মধুরা লোহিয়ার কথায়, ‘মস্তিষ্কের নানা সমস্যার সমাধানে অনেক কিছু করছে বিজ্ঞান। এখন সময় বিজ্ঞানকে সাধারণের মধ্যে নিয়ে আসার।’সেটা বুঝতে পেরেই নিজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ‘মাইন্ড ম্যাটার্স’ দল খুলেছিলেন প্রেসিডেন্সির বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপিকা পিয়ালি মুখোপাধ্যায়।
নিউরো-বায়োলজিস্ট অধ্যাপিকার দলের কাজটা ছিল, স্কুলে স্কুলে গিয়ে দেশের আগামী প্রজন্মকে মস্তিষ্ক আর তার নানা অন্ধিসন্ধির সঙ্গে পরিচিত করে তোলা। সচেতন করে তোলা মস্তিষ্কের নানা রোগ সম্পর্কেও। পিয়ালিদেবীদের উদ্যোগকে অক্সিজেন দিতে এগিয়ে আসে ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টার। ‘ওঁদের সহযোগিতা আর আমাদের উপাচার্যের উত্সাহেই এই ব্রেন অ্যাওয়ারনেস উইক এবং ব্রেন ফেয়ারের আয়োজন,’ মেলাপ্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বলছিলেন পিয়ালিদেবী।
মেলাটা কেমন? পাশাপাশি খান ছ’য়েক স্টল। তার কোনওটায় মস্তিষ্কের অ্যানাটমি এবং তার কাজ সম্পর্কে বোঝানোর মডেল থেকে চার্ট মজুত। কোথাও আবার বসে রয়েছেন মিস ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন। চমকাবেন না। মডেলটির এমনই নাম দিয়েছেন প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীরা। শব্দ, গন্ধ বা স্পর্শে আমাদের মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশে কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখাতেই তৈরি হয়েছে এই মডেল। কোনওটায় ব্রেন টিউমার থেকে স্কিত্জোফ্রেনিয়া, অটিজম থেকে ডিসলেক্সিয়া -- মস্তিষ্কের রোগগুলির ঠিকুজি-কুষ্ঠি একেবারে সহজ-সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোথাও আবার রয়েছে স্বপ্নচর্চা। মাথা খাটানোর খেলারও আয়োজন ছিল মেলায়।
এত আয়োজনের মধ্যে অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের সব চেয়ে বেশি মন কাড়ল মনোবিকাশ কেন্দ্রের কচিকাঁচারাই। অটিস্টিক, সেরিব্রাল পলসি, হিয়ারিং ইমপেয়ার্ড বাচ্চাদের বাজনা আর নাচ নজর কাড়ল প্রত্যেকের। অভিজ্ঞতা কেমন লাগল ছাত্রছাত্রীদের? ফিউচার ফাউন্ডেশনের ক্লাস টেনের ছাত্রী মৃত্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘খুব ভালো লেগেছে মেলাটা। আমার পরিবারে এক জন পারকিনসনস রোগী আছেন। তাঁর সমস্যার খুঁটিনাটিগুলো সহজ ভাষায় জানতে পেরে খুব ভালো লাগল।’
সূত্র: এই সময়, ১১ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020