২০১৪ সালের জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত হলেন কৈলাস সত্যার্থী। একই সঙ্গে পাকিস্তানি নারীশিক্ষাকর্মী মালালা ইউসুফজাই-ও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। শৈশব পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁদের যুদ্ধ এবং সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তারে অবদানের জন্য তাঁদের এই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে। কৈলাস সত্যার্থী ভারতের পঞ্চম নোবেল প্রাইজ বিজয়ী। মাদার টেরিজার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে তিনি নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেন।
কৈলাস সত্যার্থীর জন্ম মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলায় ১১ জানুয়ারি ১৯৫৪-য়। বিদিশা থেকেই তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করে হাই-ভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ নেন। পরে ভোপালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে লেকচারার হিসাবে যোগ দেন।
১৯৮০ সালে তিনি শিক্ষক হিসাবে তাঁর কেরিয়ার বিসর্জন দিয়ে সামাজিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দাসশ্রমিক মুক্তি সংগঠনের তিনি সেক্রেটারি জেনারেল হয়ে শিশুশ্রম বিলুপ্তির লক্ষ্যে সর্বস্ব পণ করে কাজ করতে থাকেন। সেভ চিলড্রেন মিশন বা বাল বাঁচাও আন্দোলনের সূত্রপাত করে গোটা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। সেই বছরই গ্লোবাল মার্চ এগেনস্ট চাইল্ড লেবার বা শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব জোড়া অভিযানে সামিল হন। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অন চাইল্ড লেবার অ্যান্ড এডুকেশনের সদস্য হিসাবে গোটা বিশ্বে শৈশব বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। এই সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষক, সমাজকর্মী, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের নিয়ে গঠিত। কৈলাস সত্যার্থী সারাজীবনে ৭৮,৫০০ শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। ১৯৯৯ থেকে ২০১১ অবধি তিনি ‘গ্লোবাল ক্যাম্পেন ফর এডুকেশন’ সংস্থার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই সংস্থার চার জন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে তিনি অন্যতম। কম্বল তৈরি শিল্পে নির্বিচারে শিশুশ্রম ব্যবহার করা হত। তিনি ‘রাগমার্ক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলেন যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় কম্বল উৎপাদনে শিশুশ্রম কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়। ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে গোটা ইউরোপ ও আমেরিকা জুড়ে এই বিষয়টি নিয়ে তিনি ক্রেতা সচেতনতা আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বড় কোম্পানিগুলি যাতে তাদের সামাজিক ভূমিকা ও অবদানের কথা ভুলে না যায় সেটা বারবার মনে করিয়ে দেওয়া। কৈলাস সত্যার্থী শিশুশ্রমকে মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকেন। একই সঙ্গে এই বিষয়টিকে তিনি দাতব্য ও কল্যাণমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চান। তিনি মনে করেন শিশুশ্রমের সমস্যা, দারিদ্র, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তিনি ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ কার্যক্রমের সঙ্গে শিশুশ্রম বিরোধী আন্দোলনকে সংযুক্ত করেছেন। তিনি ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের’ সদস্য। তিনি আন্তজার্তিক স্তরের বহু সংস্থার সঙ্গে জড়িত যেমন সেন্টার ফর ভিক্টিমস অন টর্চার (ইউএসএ), ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইট ফান্ড (ইউএসএ) এবং ইন্টারন্যাশানাল কোকোয়া ফেডারেশন। বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রসংঘের ‘মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল’ কার্যক্রমে ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম ও দাসপ্রথা দূরীকরণ নিয়ে কাজ করছেন।
শিশুশ্রম দূর করতে গিয়ে তিনি নানা সময়ে আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১১ সালের ১৭ মার্চ দিল্লির পোশাকের দোকান থেকে শিশু দাসশ্রমিককে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা নির্মম অত্যাচারের শিকার হন। এর আগে ২০০৪ সালে স্থানীয় দ্য গ্রেট রোমান সার্কাসে নিয়োজিত শিশুদের উদ্ধার করতে গিয়ে সার্কাস মাফিয়াদের আক্রমণের শিকার হন। একাধিকবার তাঁর অফিস সমাজবিরোধীরা তছনছ করে দিয়েছে। তবু তিনি লক্ষ্যে অবিচল থেকে কাজ করে গিয়েছেন। শিশুশ্রম নিয়ে বহু পুস্তিকার প্রণেতা তিনি। বিভিন্ন ম্যাগাজিনেও এই বিষয় নিয়ে একাধিক লেখা ছাপিয়েছেন।
কৈলাস সত্যার্থী বর্তমানে নিজের স্ত্রী, কন্যা, জামাতা ও এক পুত্রকে নিয়ে দিল্লিতে থাকেন। তাঁর রান্নার হাতটিও অসাধারণ।
কৈলাস সত্যার্থী বহু টেলিভিশন শো, টক শো, তথ্যচিত্র ও প্রচারচিত্রে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বহু জাতীয় ও আন্তজার্তিক পুরস্কারেও ভূষিত।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020
এই ফোল্ডারে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী সম্পর্কে ব...