জিতেন্দ্র সদার এখন বয়স ১৬ বছর। ২০০৬ সালের ২৯ মার্চ বচপন বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে। তার আগে পাঁচ বছর সে মারাত্মক অত্যাচারের শিকার হয়েছে।
ছেলেটি বিহারের সুপল জেলার শিহর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার কোনও জমি ছিল না। অন্যের জমিতে খেতমজুর হিসাবে তিনি কাজ করতেন। পাঁচ-ছ’ বছর আগে জনৈক রামচন্দ্র সদা নামে এক ব্যক্তি তার বাবা-মাকে বোঝায় ছেলেকে ভালো কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এই বলে জিতেন্দ্র ও আরও চার-পাঁচজন শিশুকে নিয়ে অমৃতসর চলে আসে। সেখানে তাকে দিলবাগ সিং নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সে আবার স্থানীয় ভূস্বামী রানা সিংয়ের কাছে তাকে বিক্রি করে। আত্মপরিচয় লুকোনোর জন্য জিতেন্দ্রর নতুন নামকরণ হয় সাগর। শুরু হয় অবর্ণনীয় কষ্টের জীবন। তাকে বহু শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করে দিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হত। সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে রাত ১১টা অবধি নিরলস পরিশ্রম চলত। সকালে নিজের হাতে পশুখাদ্য প্রস্তুত করে ২৫টি গরুকে খাওয়াতে হত। এর পর গরু, মোষ দুইয়ে দুধ বের করা, তাঁদের চান করানোর পালা চলত। তার পর ৬-৭ একর বিস্তৃত জমিতে তাকে জল, সার দিতে হত।
ঘুমনোর জন্য তাকে কোনও বিছানা দেওয়া হয়নি। পর্যাপ্ত খাবারও কোনও দিন পায়নি। শুধু তাই নয়, তাকে কারও সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে দেওয়া হত না। চার বছর ধরে প্রায় দাসের মতো তাকে অকাতরে পরিশ্রম করতে হত। যে কোনও খুঁটিনাটি অজুহাতে তাকে নির্মম ভাবে প্রহার করা হত। জানা গিয়েছে তাকে সকালে চায়ের সঙ্গে আফিম মিশিয়ে দেওয়া হত যাতে সে পুরোপুরি দিলবাগ সিংয়ের উপর নির্ভরশীল থাকে। আফিম সেবন করলে অতিরিক্ত শক্তি অনুভব করাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। শুধু তা-ই নয়, পঞ্জাবের শীতে যাতে সে কাবু হয়ে না পড়ে তার জন্য রাতে তাকে জোর করে দু’ পেগ মদ খাওয়ানো হত। জিতেন্দ্রর বাবা-মা তাকে খুঁজতে গিয়ে বচপন বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীদের সংস্পর্শে এসে পড়েন। কৈলাস সত্যার্থীর নেতৃত্বে তাকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। আশ্চর্যের কথা হল, যখন তাকে উদ্ধার করে বাবার সামনে আনা হল তখন সে কথা বলতে পর্যন্ত পারল না। আসলে ওই অমানুষিক পরিবেশে সে তার নিজের ভাষা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছে। কেবল পাঞ্জাবি বুলি ছাড়া আর কিছুই তার বোধগম্য হয় না। উদ্ধার করার পর তাকে কিছু দিন বাবা-মার কাছে গ্রামে রাখা হয়। পরে তাকে বাল আশ্রমে ভর্তি করে নেওয়া হয়। এখন সে শিশু বিক্রি বিরোধী আন্দোলনের একজন সৈনিক। প্রতিটি শিশু যেন তাদের শৈশব ফিরে পায় সে দিকে তাকিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছে সে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/13/2019