বিশ্বভারতীর নতুন আচার্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মর্মে সোমবারই বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তকে ই-মেল পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর কর্মসচিব ডি গুণশেখরন বলেন, ‘মন্ত্রক থেকে উপাচার্যের কাছে ই-মেল এসেছে। ই-মেলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্বভারতীর পরিদর্শক প্রণব মুখোপাধ্যায় আগামী ৩ বছরের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে আচার্য পদে নিয়োগ করেছেন। আগামী এক-দু’ দিনের মধ্যেই এই মর্মে চিঠি হাতে পাব’। গত রবিবারই বিশ্বভারতীর আচার্য রূপে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার পরের দিনই আর এক প্রধানমন্ত্রীকে আচার্য হিসেবে পেল বিশ্বভারতী।
নিয়ম মেনে আরও দু’জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ করণ সিং।
প্রধানমন্ত্রীর পদ গেলেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আচার্য ছিলেন এত দিন পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, তিনিই বিশ্বভারতীর আচার্য হবেন, এমন নিয়ম না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর পদ গেলেও ড. মনমোহন সিং আচার্য থাকতে পারতেন তাঁর তিন বছরের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তবে শান্তিনিকেতনের ছাত্র ও অধ্যাপকদের একাংশের মতে নির্বাচনে পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সাল থেকে পর পর তিনটি মেয়াদের জন্য তিনি আচার্য হলেও, বিশ্বভারতী নিয়ে তিনি কোনও দিনই আগ্রহ দেখাননি। ২০০৮ সালে এক বার মাত্র বার্ষিক সমাবর্তন উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন কয়েক ঘণ্টার জন্য। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী সকলেই প্রধানমন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরই পদত্যাগ করেন। ব্যতিক্রম ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল। গুজরাল অবশ্য আচার্যপদ গ্রহণ করে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদের চাইতে এই পদ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ শুধু মুখে বলা নয়, গান্ধী পরিবারের পর গুজরাল ছাড়া আর কাউকে বিশ্বভারতীর সঙ্গে এমন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে দেখা যায়নি। সে জন্য সে সময় কেউ গুজরালের পদত্যাগের দাবি তোলেনি। আসলে বিশ্বভারতীতে প্রধানমন্ত্রীকে আচার্য করতে হবে, এমন কোনও নিয়ম না থাকলেও ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকেই এক বার বাদ দিয়ে আচার্যপদে বসেছেন প্রধানমন্ত্রীরাই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই আচার্য হওয়ার (১৯৭৮-৭৯) পর নিজে পদত্যাগ করে সেই পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান উমাশঙ্কর জোশিকে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020