শুধু শিশু শ্রেণির প্রশ্নেই নয়, বিদ্যাদানের আধুনিক পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি সহ বহু প্রশ্নেই সরকারি ভাবনা ও শিক্ষকদের একাংশের ভাবনার মধ্যে বিস্তর ফারাক বর্তমান। শিক্ষাদানের আধুনিক পদ্ধতি ও মূল্যায়নের বিষয়ে শিক্ষকদের ভাবনার পার্থক্য আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও এমন বেশ কিছু ধারণার প্রসঙ্গ শিক্ষকদের লেখাতে এসেছে যা তাদের কাজের প্রতি অমনোযোগী করে তুলতে সক্ষম। শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে দেখতে পাওয়া যায় যে ৩৪৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫৫ জন শিক্ষক (প্রায় ১৬ শতাংশ) মিড–ডে মিল বা ডাইসের জন্য তথ্য প্রদানের মতো শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজকে শিক্ষক হিসাবে তাদের দায়িত্ব পালনে কাঁটা হিসাবে মনে করছেন। অথচ এ কাজগুলি যে শিক্ষার অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় সেটা এদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করেন। আসলে শিক্ষকের দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষকদের মধ্যে থাকা ধারণাটি সকলের ক্ষেত্রে এক রকম নয়। মালদা জেলার এক শিক্ষক লিখেছেন যে শিক্ষকতার পেশায় যোগদানের আগে শিক্ষাদান বলতে তাঁর ধারণা ছিল শুধুমাত্র পাঠ্য বিষয়গুলি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বোধগম্য করে তোলা। এখনও যে সমস্ত শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানই শিক্ষকতার একমাত্র দায়িত্ব বলে মনে করেন, তাঁদের এর বাইরের কোনও দায়িত্ব যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপযোগী শিশু চিহ্নিতকরণ, শিশু ভর্তিকরণ বা মিড-ডে মিলের তদারকির কাজ তাদের কাছে বিরক্তিকর মনে হবে। যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হতে পারে শিক্ষকদের উদ্যোগে ঘাটতি।
এ প্রসঙ্গে অভিভাবকদের দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষকদের মধ্যে চালু একটি ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। শিক্ষকদের একাংশের ধারণা হল যে অভিভাবকরা শুধু শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিলেই চলবে না, তাদেরকে বাড়িতে শিশুর শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এবং যে হেতু প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা শিশুকে সে সহযোগিতা করার অবস্থায় থাকে না, তাই ঐ শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশুর শিক্ষাদানের প্রশ্নে অভিভাবক-নির্ভর এই ধরনের ধারণার অর্থ হল অভিভাবকরা যে দায়িত্ব পালন করার অবস্থায় না থাকলে শিশুদের শিক্ষার প্রতি শিক্ষকের উৎসাহ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা। যা মারাত্মক ক্ষতিকর ফলাফল ডেকে নিয়ে আসবে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/3/2020