কোচবিহার জাটিগাছা এ পি স্কুলের শিক্ষক অনন্ত মোদক বলেন যে তিনি প্রথম জীবনে যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন সেটি বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত থাকার জন্য ছাত্রছাত্রীরা বেশির ভাগই দরিদ্র কৃষক পরিবার থেকে আসত, সেখানে কুসংস্কার এবং মন্ত্রতন্ত্রের প্রভাব বেশি ছিল। এই শিক্ষকের বয়স বর্তমানে ৪৫ বছর। এখনও সেই জায়গায় একই পরিস্থিতি। মালদা জেলার এক শিক্ষকের কথায় জানতে পারা গেল যে শিশুদের উপর তাদের পরিবেশের এবং তাঁদের সংস্কৃতির এক বিরাট প্রভাব পড়ে। তাঁর লেখায় :
‘সংখ্যা দেখানোর পর ১ থেকে ১০ , ১১ থেকে ২০ সংখ্যাগুলি ছাত্রছাত্রীরা হাতের লেখা খাতার ডান দিকে থেকে বাঁ দিকে দাগ টেনে টেনে লেখে। অথচ শেখানো হয় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে দাগ টেনে টেনে। অনেক অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি যে, তারা যখন সকাল বেলায় মসজিদে আরবি পড়তে যায় তখন আরবি পড়া এবং লেখা ডান দিক থেকে বাঁ দিকে হয়। এই সমস্যা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রবল আকারে দেখা যায়।
আবার কোচবিহার জেলার এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, ‘আমি ১২ কিমি দূর থেকে গিয়ে সাড়ে দশটার মধ্যে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হই। প্রতি দিনই পাশের বাড়ি থেকে একটি লাল রং-এর প্লাসটিকের চেয়ার কেউ না কেউ এনে দেয়, আমি বারান্দা বা মাঠের মাঝে বসে থাকি। দূর থেকে আমায় ছেলেমেয়েরা দেখার পর স্নান করে স্কুলে আসে ১১টার পর।’
দক্ষিণ দিনাজপুরের পশ্চিম বজরপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা তিথি সরকারের মতে, ‘বইয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বিদ্যালয়ে থাকার সময় টুকুতেই। পড়াশোনা করাটা তাদের বেশির ভাগ কাছেই বোঝা স্বরূপ।’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা থেকে এও জানা গেছে যে পড়াশোনার পরিবেশ না থাকার জন্য ছেলেমেয়েরা খেলাধূলা করতে করতে, চাষের কাজ করতে করতে, ভাইবোনদের সামলাতে গিয়ে পড়াশোনা সব ভুলে যায়। যে হেতু বাড়িতে পড়াশোনার কোনও পরিবেশ থাকে না তাই পড়াশোনার প্রতি শিশুদের একটা ভীতি জন্মায়।
কেন এমনটা হয়? এই পরিবেশগত পার্থক্যগুলি কী ভাবে আসে? শিক্ষকদের একটা অংশ অভিভাবকদের উপর যে ভাবে দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছেন সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এ সবের সঙ্গে সমাজ সংগঠনের যোগটাকে কি অস্বীকার করা যাবে?
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/28/2020