এই বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিরও একটা বড় ভূমিকা আছে। যেমন কয়েক জন শিক্ষকের কথায় শিশুদের বয়সের দিকটি উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা শিশুদের পিছিয়ে থাকার কারণ হিসাবে শিশুদের ভর্তির বয়সকে দায়ী করেছেন। মুর্শিদাবাদের গোপীনাথপুর ঢিপিডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রী বৈকুণ্ঠ মল্লিক–এর মতে :
‘প্রথম ভর্তির ক্ষেত্রে আমার যেটা মনে হয়েছে পাঁচ বছর বয়সটা ভর্তির বয়স হলেও সকল শিশুর জন্য নয়। অনেক শিশুর দৈহিক বয়স পাঁচ বছর হলেও মানসিক বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হয় না। ফলে ঐ শিশুগুলির গ্রহণক্ষমতা ঐ সময় গড়ে ওঠে না। ... ভর্তির সময় ভর্তির উপযুক্ত হয়েছে কি না সেটা দেখারও কোনও সুযোগ থাকে না।’
শিক্ষকদের কথায় ড্রপআউট শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত কথা উঠে এসেছে। শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ –এ স্কুলছুট শিক্ষার্থীদের বয়সের উপযুক্ত শ্রেণিতে ভর্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেদর কথায় এর সমস্যার দিকগুলি উঠে এসেছে। মুর্শিদাবাদের ৩৯, লালগোলা হাইমাদ্রাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্রাবণী সাহা –এর মতে, ‘একটি শিশু পড়া ছেড়ে গেছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। দু’ বছর পর উপস্থিত, আবার পড়ব। কোথায় কোন শ্রেণিতে আমরা জানি না।’
শিক্ষকদের কথা থেকে এটাও জনা গেছে যে ড্রপআউট শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিশুদের সাথে এক সাথে রাখার ফলে পড়াশোনায় তফাত দেখা যায়। এ ছাড়াও কোনও কোনও শিক্ষকের কথায় সাধারণ ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর কথা উঠে এসেছে, তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে রাখার ফলে পাঠদানে ত্রুটি দেখা দেয়। কিন্তু, এই ধরনের সমস্যাগুলির চেয়ে অনেক ব্যাপক হল, সাধারণ পরিকাঠামোগত অভাব। বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক এলাকাগুলিতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। আবার সে সব জায়গায় আছে ভাষাগত সমস্যা — স্থানীয় ভাষার সঙ্গে পঠনপাঠনের ভাষার মিল নেই। অন্তত এক জনও স্থানীয় ভাষার শিক্ষক থাকলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। মোট কথা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলির ক্ষেত্রে সরকারি নীতিতে বড় পরিবর্তন দরকার, যেমন বদল দরকার শিক্ষক ও সমাজের অন্যান্য অংশের দৃষ্টিভঙ্গির।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/27/2019