শিশুদের এই অনিয়মিত উস্থিতির বিষয়ে একটি বড় অংশের শিক্ষক অভিভাবকদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কথাই উল্লেখ করেছেন। কেউ লিখেছেন যে অভিভাবকদের পেশার চরিত্রটাই এমন যে তাঁরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে দায়িত্ব পালনের অবস্থায় নেই, আবার কেউ কেউ অভিভাবকদের সচেতনতাকেই সরাসরি দায়ী করেছেন। বাড়ির অর্থকরী কাজের জন্য (চাষের কাজে সাহায্য করা ইত্যাদি) বা ঘরের কাজের (ভাইবোনদের দেখা ইত্যাদি) জন্য শিশুর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অভিভাবকদের সচেতনতাকেই দায়ী করেছেন। তবে বাড়ির ঘরোয়া কাজে বা বাড়ির অর্থকারী কাজে সহায়তা করলেই যে শিক্ষকরা অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবের কথা বলেছেন, এমনটা নয়। বাড়ির ঘরোয়া কাজে বা বাড়ির অর্থকরী কাজে সহায়তা করার পরেও অভিভাবকদের সচেতনতাকে অভিযুক্ত করেননি এমন শিক্ষক পাওয়া গেছে। যেমন বহরমপুর কার্যশালার ৬ জন শিক্ষক বাড়ির ঘরোয়া কাজের জন্য শিশু অনুপস্থিত হচ্ছে বলেছেন, কিন্তু মাত্র ৩ জন শিক্ষক এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতাকে দায়ী করেছেন। তবে শিশুর শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহের প্রশ্নটি আজ এক তর্কাতীত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সময় শিক্ষকদের একটি বড় অংশের শিশুর অনুপস্থিতর জন্য অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করার বিষয়টি ভেবে দেখার দরকার আছে। এটা কি সত্যিই সচেতনতার অভাব, না কি এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোন সমস্যার ইঙ্গিত?
কোনও কোনও অভিভাবক যে নিজেরাই এ সম্পর্কে সচেতন, সেটাও তো আমরা কারও কারও লেখা থেকে দেখতে পাচ্ছি। বাটাইগোল টি জি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মলয় ব্যানার্জি লিখেছেন :
‘ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হয় না। এই ব্যাপারে অভিভাবকদের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আলোচনা করি এবং মায়েদের নিয়ে মিটিং করি যে তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের কেন রোজ বিদ্যালয়ে পাঠাও না। তার উত্তরে তারা (মায়েরা) জানায় যে তারা প্রতি দিন সকাল ৭টার আগে কাজে চলে যায় এবং ৩-৩০/৪টার সময় বাড়িতে আসে। তাই তারা ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে পারে না বা বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারে না। ... মায়েদের বক্তব্য যে শিক্ষকরা যেন রোজ প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ধরে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/28/2020