যে কারণেই ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়-ছুট হোক না কেন, শিক্ষকদের লিখন থেকে এটা স্পষ্ট বলা যায় যে, প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়-ছুটের সমস্যাটি আর কোনও ভাবেই অনুপস্থিতির সমস্যার স্তরে নেই। শিক্ষকদের লেখা থেকে সমস্যাটির গুরুত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায় উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিশুদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু এটা যে অগ্রাহ্য করারও বিষয় নয়, সেটা বিদ্যালয়-ছুট সংক্রান্ত শিক্ষকদের মতামতের বিন্যাসের ধরন থেকে পরিষ্কার। এবং এই বিদ্যালয়-ছুট হওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান শিক্ষকরা বহু ক্ষেত্রেই আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মধ্যেই দেখছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুবিমল ঘোষ লিখেছেন, ২০০৯ – ২০১০ শিক্ষাবর্ষে তাঁর বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করে নইম সেখ ও হাসিনা খাতুন পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর বিদ্যালয়ে আসছিল না। — ছেলে মেয়ে দু’টি লেখাপড়ায় খুবই ভাল ছিল। তিনি প্রথমে ওদের ডেকে পাঠালেন, কিন্তু ওরা এল না। মাস্টারমশাই নিজে গিয়ে ওদের বাবা মায়ের সাথে কথা বললেন। তাঁরা বললেন ওদের পাঠিয়ে দেবেন, তার পরেও ওরা বিদ্যালয়ে এল না। মাস্টারমশাই খোঁজ নিয়ে জানলেন ছেলেটি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসাবে কাজ করছে। আর মেয়েটি মায়ের সাথে বিড়ি বাঁধে।
সুবিমলবাবু আরও লিখেছেন ---
‘এর পর হঠাৎ এক দিন নইমের সাথে আমার দেখা হয়ে যায় এবং ও বলে স্যার আমাকে একটা ক্লাস ফাইভের ইংরাজি বই দেবেন? আমি বললাম, তুই বই নিয়ে কী করবি। ও বলল, পড়ব। আমি বললাম, তা হলে তুই স্কুলে গেলি না কেন? তখন ও বলল আমার বাবা যক্ষ্মা রোগী, আমার দিদির বিয়ে দিতে হবে, ভাইকে পড়াতে হবে। তাই আমি কেরলে যাব রাজমিস্ত্রির সাথে কাজ করতে। আমি কী ভাবে স্কুলে যাব বলুন? আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি।
তাই আমার মনে হয় আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও এমন অনেক উন্নতি প্রয়োজন যা প্রাথমিক শিক্ষার স্বাভাবিক উন্নতি ঘটাবে।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/7/2020