বাটাইগোল টি জি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মলয় ব্যানার্জি লিখেছেন যে ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে তাঁরা মায়েদের সঙ্গে মিটিং করেছিলেন। ওই মিটিং-এ তাঁরা জানতে পারেন যে বেশির ভাগ মা-ই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকেন পেশার কারণে। তাই তাঁরা ছেলেমেয়েদের ওপর নজরদারি করতে পারেন না বা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে মায়েদের অনুরোধ ‘শিক্ষকরা যেন রোজ প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ধরে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন’ --- মায়েদের এই প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করার দরকার আছে। কারণ শিক্ষকদের লেখা থেকে দেখা যায় বহু পরিবারেই শিশুর প্রতি নজর দেওয়ার ব্যাপারে পেশা একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রশ্নে কোনও স্থায়ী সমাধানের পথ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এটা সত্যি যা এই সব পরিবারের শিশুদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার সম্ভাবনাটি এক প্রকার অলীক কল্পনা হয়ে থাকছে। এই প্রসঙ্গে পেশার খাতিরে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখের দাবি রাখে। এই অন্যত্র চলে যাওয়ার ব্যাপারটি পুরুলিয়া ও কোচবিহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে শিক্ষকদের লেখা থেকে বেরিয়ে এসেছে। পুরুলিয়ার উপস্থিতি বিষয়ে মতামত রাখা শিক্ষকদের ৪০ শতাংশ এবং কোচবিহারের ২৯ শতাংশ শিক্ষক বলছেন যে তাঁদের বিদ্যালয়ের এলাকায় একটা বড় অংশের অভিভাবকেরা বছরের একটা দীর্ঘ সময় কাজের জন্য বাইরে চলে যায় এবং সেই সময় শিশুদেরকেও তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়। ফলে শিশুরা একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা অনিয়মিত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কোচবিহারের শিক্ষকরা অবশ্য সমাধানের এক বিশেষ পন্থা অবলম্বন করেছেন (তাঁরা অভিভাবকদের বলছেন, তারা যেন তাদের শিশুদের গ্রামে অন্যদের কাছে রেখে যায়)। এ ভাবে তাঁরা খানিকটা সফলও হয়েছেন বলে লিখেছেন। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের আরও নানা পথ ভেবে দেখা দরকার। পুরুলিয়া জেলার শিক্ষকেরা এর সমাধান হিসেবে আবাসিক স্কুলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/26/2020