অনেক শিক্ষক শিশুশ্রমকেই স্কুলছুটের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার শিবাণীপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ইরা মণ্ডল লিখেছেন :
‘আমাদের বিদ্যালয়টি নদী থেকে ১৫ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত। বর্ষার সময় শিশুরা নদীতে মিন (মাছের চারা) ধরতে যায়। কেউ বা শাড়িতে জরির কাজ করে স্কুলে আসে। কারও বাবা চাল ধানের ব্যবসা করেন, শিশুরা বাবাকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করে। সে জন্য কিছু শিশু অনিয়মিত আসে। তার মধ্যে কিছু শিশু, শতকরা ৫ জন, ড্রপআউট হয়ে যায়।’
শিশুশ্রমের এই সমস্যা স্কুলছুটের কারণ হিসেবে মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষকরা সব চাইতে বেশি আলোচনা করেছেন, যা থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় এই সমস্যাটির বিশেষ গুরুত্বের অনুমান করা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার জন্য মেয়েরা স্কুলছুট হচ্ছে বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। দেশান্তরের কারণে স্কুলছুটের সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন পুরুলিয়া সহ আরও দু’টি জেলার শিক্ষিকরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে কোচবিহার জেলার কোনও শিক্ষক এই কারণে স্কুলছুট হওয়ার কথা লেখেননি। যদিও দেশান্তরের জন্য শিশুদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কথা ওই জেলার অনেক শিক্ষকই আলোচনা করেছেন।
আবার, মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ না পাওয়ায় যে শিশুর বিদ্যালয়-ছুটের কারণ হতে পারে তা আমরা জানতে পারি মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু ঘোষের লেখা থেকে। সাঁওতাল শিশু মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় কী ভাবে বিদ্যালয়ে ছুট হয়ে পড়েছে তার মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। তিনি লিখেছেন :
‘শ্রীতন সোরেন সাঁওতাল ছেলে। ... প্রতি দিন ইস্কুলে গেলে তাকে বইতে হয় যে সব বই, শ্রীতন জানে, তা তাদের ভাষা নয়। তাদের জীবনের নয়, তাদের জানারও নয়। তবু তাকে পড়তে হয়। তার মায়ের ভাষা ছেড়ে শিখতে হয় বা আ ঙ। যত দিন যায়, শিখতে শিখতে নিজের ভাল লাগার বাইরে নিজের অনিচ্ছার বাইরে প্রথমে ক্লাসঘরে, পরে সমস্ত ইস্কুলেই ক্রমশ শ্রীতন আলাদা হয়ে যায়। ... সরে যায় ক্লাস থেকে, বন্ধুদের থেকে, যারা বাংলায় কথা বলে, ক্রমশ ভুলে যায় মাস্টারমশাইয়ের কথা। দূর সব হিত উপদেশ। ক্রমশ শ্রীতন সরে যায় ইস্কুল থেকে। সে এখন শুধু বন্ধুছুট নয়, স্কুলছুটও।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020
শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে আরও কিছু সমস্যার...