যে সব শিক্ষক তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিশুভর্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের অভাবনীয় সাফল্যের কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমাদের রাজ্য এ ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে। দু’ এক জন শিক্ষক অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন। কিন্তু মোটের উপর এ ব্যাপারে সবাই এক মত যে পশ্চিমবঙ্গ সত্যিই বিরাট সাফল্য পেয়েছে। শিশু ভর্তির এই সাফল্যের তখনই তাৎপর্য থাকে, যখন সেই শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রেখে নিয়মিত উপস্থিত করানো সম্ভব হয়। উপযুক্ত গুণমানের শিক্ষা প্রদানের জন্য এটা প্রয়োজন। শুধু শিশুভর্তির পরিসংখ্যানে কিছু প্রমাণ হয় না। শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে আমরা দেখি যে, শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার ব্যাপারে শিক্ষকরা সাফল্যের যে ছবি তুলে ধরেছেন শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতির ব্যাপারে, কিন্তু তাঁরা ততখানি জোর দিতে পারছেন না। যদিও এই ক্ষেত্রটিতে অনেকটা এগোনো গেছে, কিন্তু তার পরও এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে বেশ উদ্বেগ দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে শিশুদের হাজিরার প্রশ্নে সরকারি পরিসংখ্যান সে ভাবে পাওয়া যায় না বটে, তবে অন্যান্য সমীক্ষা থেকে এ ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া যায় (যদিও সেই সব সমীক্ষার তথ্যের মধ্যে এ বিষয়ে পার্থক্য আছে)। প্রতীচী ট্রাস্টের ২০০৮ – ০৯-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে যে গত দশকের শুরুর অবস্থার তুলনায় দশকের শেষের দিকে বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতিতে অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু একই সাথে ঐ সমীক্ষায় এটাও দেখে গেছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুর অনুপস্থিতির হার তখনও ২৫.২ শতাংশ রয়ে গেছে (প্রতীচীর ২০০১ – ০২ এর সমীক্ষা অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু উপস্থিতির হার ছিল ৫৮ শতাংশ। কিন্তু ২০০৮ – ০৯ এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.৮ শতাংশ।)। সুতরাং বিদ্যালয়ে উপস্থিতির ব্যাপারটি নিয়ে এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে। অনুপস্থিতির প্রশ্নটি এখনও গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে শিক্ষকদের লেখা থেকে বেরিয়ে আসা মতামতটি প্রতীচীর সমীক্ষাকৃত ফলাফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/17/2020