মুর্শিদাবাদ জেলার আর এক শিক্ষক তাঁর বক্তব্যে বলেছেন :
‘মায়েদের ও অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু হল, তাঁদের পরামর্শমতো সভা ডাকার সময় নির্ধারিত হল বেলা ২–৩০ থেকে ৩–৩০-এর মধ্যে। তার পর থেকে ছাপানো চিঠিতে তাঁদের দেওয়া সময়ে সভা ডাকা হয়ে আসছে। সুখের বিষয় আগের চেয়ে অনেক বেশি মায়েরা এবং অন্য অভিভাবকরা সভায় উপস্থিত হচ্ছেন।’
এই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতাগুলি থেকে পরিষ্কার যে, উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে অভিভাবকদের সাড়া ও সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হল, সেই উদ্যোগ গ্রহণ করার ব্যাপারটিই পুরোপুরি শিক্ষকের শুভেচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যে শিক্ষক স্বউদ্যোগী হয়ে কিছু করছেন, তিনি বিদ্যালয় পরিচালনায় অভিভাবক ও স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে নিতে স্বক্ষম হচ্ছেন, অন্যেরা তা পারছেন না। এই অক্ষমতার পেছনে সম্ভবত একটা বড় সমস্যা হল, প্রশাসনিক ভাবে জিনিসটাকে যে ভাবে ছকে দেওয়া হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণটাকে একটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত করা হয়েছে। যার ফলে, ভিইসি, এমটিএ প্রভৃতি গড়ে তোলা হলেও, সেগুলো সচল ও প্রাণবন্ত থাকছে এমনটা বড় একটা দেখা যাচ্ছে না। পুরুলিয়ার নতুনগ্রাম বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমরেন্দ্রনাথ মিশ্র-এর কথায় :
‘বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের কাজে উন্নতির জন্য বিভিন্ন ধরনের কমিটি গঠিত হয়েছে। যেমন ভিইসি কমিটি, মাতা-শিক্ষক কমিটি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু দু:খের বিষয় ঐ সব কমিটি আদতে কোনও কাজ করে বলে আমার সন্দেহ আছে, কারণ কোনও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভায় তাঁরা প্রায় অনুপস্থিত থাকেন। ফলে আলোচনাসভার মূল উদ্দেশ্যেই খামতি থেকে যায়।’
আবার জলপাইগুড়ি জেলার বামন দাস স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোমনাথ সরকারের মতে, ‘ভিইসি-এর অনেক সদস্য সে ভাবে উদ্যোগী হন না কারণ তাঁদের ছেলেমেয়েরা এই বিদ্যালয়ে পড়ে না। আমার বিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করে তারা অন্য ভিইসি থেকে আসে।’ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার নেবুতলা রামরতনপুর নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের তাপস কুমার কয়াল-এর মতে :
‘বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য তদারকি কমিটি এবং ভিইসি আছে। শিক্ষা, বিদ্যালয় বা ছাত্রছাত্রীদের মন বোঝার ক্ষমতা বিভিন্ন কমিটির অধিকাংশের মধ্যে নেই। বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের উন্নতি, পরিকাঠামোর উন্নতি কী ভাবে হবে সেই পরামর্শ পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় শিক্ষার এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020