দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার লস্করপুরের এক শিক্ষিকার অভিজ্ঞতা একটু অন্যরকম। তিনি বলছেন, ‘ ...অনেক দিন থেকে রাস্তায় কাজ করার পর পৌরমাতা উদ্বৃত্ত ইট দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে রেখেছেন। মিটিং করে ওইগুলি বিদ্যালয়কে দেবেন বা না দেবেন বলবেন। এখন বলছেন ইলেকশনের তারিখ ঘোষণা হয়ে গেছে আলোচনা হবে না। সেই দিন ইটের উপর পড়ে একটি বাচ্চার মাথা ফেটে যায়। টিফিন টাইমে বিশেষ করে এর জন্য আমাদের শিশুদের পাহারা দিয়ে রাখতে হয়।’ শিক্ষকদের কথায় এ রকম অভিযোগও উঠেছে যে কমিটির সদস্যদের অনেকেই তাঁদের কাজের অবহেলা তো করেনই, এমনকী অর্থ নিয়ে তাঁদের বেশি উৎসাহ থাকে। মুর্শিদাবাদ জেলার এক শিক্ষকের মতে, ‘গ্রাম/ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির মাননীয় সদস্য অথবা সদস্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে বেশির ভাগ সময়ে উদাসীন থাকেন। কিন্তু আর্থিক ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই।’ অন্য এক জন বলছেন, ‘বিদ্যালয় আর্থিক অনুদান (গৃহ নির্মাণের জন্য) পেলে তখন ভিইসি/ডবলুইসি সদস্যদের উৎসাহ দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের অনেকে মালপত্র জোগান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন -- অনেক সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।’ শিক্ষকদের কথা থেকে যে একটা প্রধান বক্তব্য বেরিয়ে আসে তা হল, যে সমস্ত কমিটির দায়িত্ব হল শিক্ষকদের সাহায্য করা, শিক্ষার উন্নতি ঘটানো, বিদ্যালয়কে সুন্দর করা সেই সমস্ত কমিটিই শুধু যে তাদের কাজকে অবহেলা করছে তাই নয়, এমনকী তারা শিক্ষকদের উপর নানা রকম ভাবে চাপের সৃষ্টি করে, শিক্ষকদের হয়রান করার চেষ্টা করে, খবরদারি করে। অন্য দিকে অনেক শিক্ষকের কথা থেকে এ-ও জানা যায় যে, শিক্ষকদের উপর রাজনৈতিক ভাবেও অনেক চাপ আসছে। জলপাইগুড়ি জেলার ধূলারাম নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ কুমার রায় এ রকমই এক পরিস্থিতির কথা তাঁর লেখায় বলেছেন, ‘কোনও শিক্ষক বিপরীত রাজনৈতিক মেরুতে অবস্থান করলে পদে পদে শিক্ষক মহাশয়কে হেনস্থা করার চেষ্টা লক্ষ করা যায়।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/14/2019