মুর্শিদাবাদ জেলার জনৈক শিক্ষকের মতে :
‘আমাদের শিক্ষকদের সিংহভাগই দায়িত্ববান। কিছু আছেন যাঁরা দায়িত্ব অবহেলা করেন। পরিদর্শনের অভাবে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধরুন আপনি বেলা চারটে পর্যন্ত স্কুল করছেন। আপনার পাশের স্কুলের শিক্ষক প্রতিদিন ২.৩০তে আপনার সামনে দিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে চলে যাচ্ছে। এটা যদি দেখার কেউ না থাকে তবে সকলের মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। ... তাই পরিদর্শন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা একান্ত জরুরি।’
তবে যে মাত্রাতেই পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু থাক না কেন, কোনও পরিদর্শক যদি তাঁর দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করতে পারেন তবে পরিদর্শন হলেও পরে তা বিশেষ কাজে আসে না বলে মুর্শিদাবাদ জেলার এক শিক্ষক লিখছেন :
‘প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কদাচিৎ বিদ্যালয় পরিদর্শক মহাশয়দের আগমন ঘটে। যেখানে পরিদর্শন করা হয় সেখানে সাধারণ ভাবে তাঁরা বিদ্যালয়ের কাগজপত্র, হিসাবনিকাশ, শিক্ষক-ছাত্র হাজিরা, মূল্যায়ন বই দেখে কাজ শেষ করেন। কোনও কোনও সময় শ্রেণিতে প্রবেশ করেন আবার চলে আসেন। সাধারণ ভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকার পাঠদানের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা যায় না। সহশিক্ষক–শিক্ষিকা বা প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকার কোনও না কোনও খুঁত প্রমাণে আগ্রহী দেখা যায়।’
পরিদর্শন ব্যবস্থাটিকে যথাযথ কার্যকর করার জন্য যেটা দরকার ছিল সেটা হল পরিদর্শকদের ভূমিকাটিকে সেতুবন্ধক করে তোলা। অর্থাৎ তিনি এক দিকে যেমন বিদ্যালয়ের সমস্যা ও ত্রুটিগুলি দেখবেন, তেমনি আবার অভাব অভিযোগগুলি শুনবেন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবেন যাতে এগুলি দূর করা যায়। দুর্ভাগ্যবশত, এমনটা এখনও হয়ে ওঠেনি বলেই শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে।
তবে পরিদর্শন ব্যবস্থার বিভিন্ন দুর্বলতাকে ভরাট করতে শিক্ষাবন্ধু নিয়োগের যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা-ও যে বিশেষ কাজে আসছে, এমনটা শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে বেরিয়ে আসেনি। শিক্ষাবন্ধুরা শিক্ষকদের কাজে সহযোগিতার পরিবর্তে শিক্ষকদের উপর খবরদারি করতেই বেশি আগ্রহী বলে কোনও কোনও শিক্ষক মত প্রকাশ করেছেন। বিদ্যালয় প্রশাসনে ভিইসি, এমটিএ প্রভৃতি গণকমিটিগুলো একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তেমনটা করার মতো পরিবেশ এখনও সৃষ্টি করা যায়নি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/10/2020