অনেক সময় দেখা গেছে যে, শিশুরা যে আর্থসামাজিক অবস্থা থেকে উঠে আসে তা তাদের পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে অনুকূল নয়। হয়তো বা বাড়ির পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যা শিশুগুলিকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়। এমনই একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন মুর্শিদাবাদ কর্মশালায় উপস্থিত সুবিমল ঘোষ। তিনি লিখছেন :
‘আমি প্রথম শ্রেণির বাংলা পড়াতে গিয়ে সে দিন সরস্বতী হাজরা নামক একটি মেয়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম। ... শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত সকল শিশুই কিছু না কিছু চেষ্টা করলেও সরস্বতী কেবল বলছিল, ‘আমি লিখতে পারি না’ এবং বই, খাতা, স্লেট ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখছিল। তাকে কাছে ডেকে উৎসাহ দেওয়া সত্ত্বেও সে লিখতে পারছিল না। আমি পরে ঐ গ্রামে আমার সহকারীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তিনি এই মেয়েটিকে চেনেন কি না এবং মেয়েটির এ ধরনের ব্যবহারের কারণ কী। সহকারীটি বলে যে এক মাস আগে মেয়েটির মা মারা গেছে এবং বাবা আবার বিয়ে করেছে। পরের দিন আমি যখন শ্রেণিতে গেলাম তখন প্রথমেই সরস্বতীকে আমার কাছে ডেকে নিলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার মা তোমাকে ভাত খাইয়ে দিয়েছে? ও বলল হ্যাঁ এবং আমি ওকে আদর করে বললাম, তুমি খুব ভালো মেয়ে। তখন ও খুব খুশি হয়ে আমার কাছে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি ওকে সবার সাথে লিখতে বললাম। ও আগ্রহী হয়ে লিখতে চেষ্টা করল এবং আমার সাহায্যে লেখা শুরু করল।’
এই ভাবেই যদি শিক্ষকেরা শ্রেণির পিছিয়ে পড়া শিশুগুলির দিকে একটু বিশেষ নজর দেন এবং কী কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছে তা অনুধাবন করার চেষ্টা করেন তবে অনেকাংশেই সমস্যাগুলিকে এড়ানো সম্ভব হতে পারে। কিছু শিক্ষকের কথা অনুযায়ী, ছকে বাঁধা শিক্ষাদান পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে যদি এই নতুন পদ্ধতির সাহায্যে শিশুকে শিক্ষাদান করা যায় তবে তা খুব সহজেই শিশুর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/28/2020