পুরুলিয়ার এক শিক্ষকও সরাসরি নতুন পদ্ধতিটির বিরোধিতা করেছেন। তিনি লিখেছেন :
‘আমরা যখন লেখাপড়া শুরু করেছিলাম তখন প্রথমে বর্ণপরিচয় (অ, আ...ক, খ...) শিখেছিলাম। তার পর শব্দ, বাক্য, প্রভৃতি শিখেছিলাম। আমার মনে হয় সেই পদ্ধতিটিই বর্তমান পদ্ধতির চেয়ে ভালো ছিল। বিভিন্ন লোকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে দেখেছি যে, যে যে সচেতন অভিভাবক বাচ্চাদের চার বছর বা সাড়ে চার বছর বা তারও কম বয়স থেকে বাড়িতে বর্ণপরিচয় অ, আ... ক, খ ... ইত্যাদি ০, ১, ২, ... ইত্যাদি A, B, C… ইত্যাদি শিখিয়েছে, সেই সব বাচ্চাই পরে ভালো স্থান পাচ্ছে। লেখাপড়ায় ভালো ছেলেমেয়ের মর্যাদা পাচ্ছে। অথচ কর্মশালায় শেখা আধুনিকতম পদ্ধতিগুলি শ্রেণিকক্ষে আয়োজিত করার পরিকাঠামোই বিদ্যালয়গুলিতে নেই।’
‘সচেতন’ বলতে প্রায়ই কিন্তু উচ্চবিত্তদের কথা মনে রাখা হয়, এটা একটা মুস্কিল। বিভাজিত সমাজে দারিদ্র নিজেই যেখানে একটি অভিশাপ সেখানে দরিদ্রদের পক্ষে যে উচ্চবিত্তদের মতো করে ভাবা সম্ভব নয় এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। আবার এটাও ভুলে যাই যে গরিব ও পশ্চাদপদদের নীচে থেকে টেনা আনাটাই একটা বড় কাজ — সে নিজে নিজেই যদি উঠে আসতে পারত তা হলে সরকারি স্কুল ব্যবহারের প্রয়োজনই ছিল না। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর দুর্বলতা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে নতুন পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যাচ্ছে না — এ কথাটা কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে সন্দেহ থাকে। এই শিক্ষকেরাই অনেক সময় লিখেছেন যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান না করা গেলে গাছতলায় শিক্ষাদান করার চেষ্টা তাঁরা করছেন।
কেউ কেউ আবার এ কথাও বলেছেন যে নতুন পদ্ধতিতে বাচ্চাদের A, B না শিখিয়ে একেবারে বই পড়ানো শুরু হয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মনে কোনও প্রকার অক্ষরজ্ঞান হয়নি। যা যা পড়ানো হয় শিশুরা তাই বলে কিন্তু আলাদা করে জানতে চাওয়া হলে কিছুই বলতে পারে না। সংখ্যায় কম হলেও এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে ঐ শিক্ষকরা বাস্তবিক নতুন পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন। তাই প্রশিক্ষণ শিবির ও অন্যত্র আরও খোলাখুলি আলোচনার জায়গা থাকা উচিত যেখানে এই শিক্ষকেরা তাঁদের অসুবিধার জায়গাগুলি তুলে ধরতে পারেন।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020