শিশুর বিদ্যাচর্চা নির্ভর করে বিদ্যালয়ে তাকে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তার ওপর। অন্তত, এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনও যেটা দেখা যাচ্ছে তা হল বাড়ির পড়ার ওপর জোর। এটা যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে বাড়িতে না পড়লে বিদ্যাশিক্ষা হবে না। অথচ বিশ্বের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানতে পারি যে প্রাথমিক স্তরের যা পড়া সেটা স্কুলের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। তা হলে আমাদের দেশে এমন একটা ধারণা কী করে গেড়ে বসে আছে। এর আংশিক কারণ, আমরা প্রথাগত ভাবেই বাড়িতে পড়ার উপর জোর দিয়ে এসেছি, সেই প্রথাতেই শিক্ষকরাও লেখাপড়া করে এসেছেন। এবং সেই প্রথানুসরণ থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। এই সঙ্গে যোগ হয়েছে, শিশুদের পাঠ্যবস্তুর বোঝা; এমন কী বহু মনোযোগী ও দরদি শিক্ষকের পক্ষেও ক্লাসে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে অভিযোগ আসছে। এ বার যে বাড়িতে পড়ানোর লোক নেই — বেশির ভাগ বাড়িতেই নেই — তাঁদের কী উপায়? যাঁরা নিজেরা বাড়িতে পড়াতে সক্ষম তাঁরা আবার নিজেরা বোঝা কমাচ্ছেন প্রাইভেট ট্যুইশনির মাধ্যমে। আবার এদের অনুকরণে গরিব মা-বাবারাও প্রাইভেট ট্যুইশনি ছাড়া লেখাপড়া হবে না বলে মন করতে লেগেছেন। বাড়ির পড়ার উপর জোর শুধু মানসিকতা বা পাঠ্যবস্তুর বোঝাই নয়, সেই সঙ্গে আছে পরিকাঠামো গত সমস্যা। অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বস্তুত বেড়েছে। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা নগণ্য। এটাও তাঁদের মধ্যে হতাশার জন্ম দেয়।
‘বাড়িতে পড়াশোনার কোনও প্রচলন নেই, সন্ধ্যাবেলা লন্ঠন জ্বলে বাড়িতে, তবে সেটা পড়া শোনার জন্য নয়, বাড়ির কাজের জন্য। অভিভাবকদের প্রায় সকলেই নিরক্ষর, টিপসই দিয়ে বিদ্যালয়ে কাজ চলে।’ এক জন শিক্ষকের তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আশানুরূপ ফল না পেয়ে এটিই হয়তো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অবশ্য আশার কথা এই যে কিছুটা হলেও বিদ্যালয়ে পড়া শেষ করার উপর জোরটা বাড়ছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/14/2019