শাস্তিদানের বিরোধী শিক্ষকরাও আছেন। তাঁরা কী বলেন শোনা যাক :
‘শাস্তি পাওয়ার ভয়ে অনেকে বিদ্যালয় ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু আজ আর শাস্তি নয়, প্রয়োজনে উৎসাহদান। কেউ পড়া পারেনি তো কী হয়েছে, তাকে না মেরে, শাস্তি না দিয়ে তাকে তার চেষ্টার জন্য তো উৎসাহ দেওয়া যায়। তা হলে সে পরবর্তীতে ভুল করে না বললেই চলে। তবে এটা ঠিক কথা বলতে চাই, একটু ধৈর্য ধরুন। পড়া না পারলে তাকে আরও কাছে টেনে নিন, দূরে সরিয়ে দেবেন না। যারা উন্নতি করছে তাদেরকেও আরও উৎসাহ দিন, যাতে ওরা আরও ভালো করতে পারে, কিন্তু যারা পিছিয়ে পড়ছে, তাদেরকে একদম নিজের কাছে টেনে নিন। প্রয়োজনে তাদের পাশে বসে তাদেরকে পড়া বোঝান, আপনাকে তারা পাশে পেলে নিজের করে নেবে। যত ভয়ভীতি কাটিয়ে উঠবে ততই তারা নিজের উন্নতি করবে।’
ছাত্রছাত্রীকে শাস্তি প্রয়োগেই পড়াশোনা শেখানো সম্ভব— এ কথা ঠিক নয় বলে অনেকেই মনে করছেন। এটা খুব আশার কথা যে, তাঁরা মনে করছেন শিশুকে তার মতো করে কাছে টেনে নিয়ে শেখানো দরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও একাংশ যে মনে করছেন শাস্তিদান দরকার, তা নিয়ে সমাজে আলোচনা দরকার। শাস্তির তাৎক্ষণিক ফলাফলের চেয়ে ভবিষ্যৎ এবং দীর্ঘস্থায়ী ফলটি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করা উচিত। আজ যে শিশু একটি চড় খেল, তার তাৎক্ষণিক অনুভূতি হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে মিলিয়ে যাবে, কিন্তু ‘ভুল করলে মার খেতে হয়’ এই যে শিক্ষা তা তো ‘ভুল করলে মার দিতে হবে’-তে বদলে গিয়ে তার মনের ইতর ভিত গেড়ে বসে গেল। বস্তুত এর সঙ্গে বৃহত্তর সামাজিক হিংসার তো একটা বড় যোগ আছে — কথাবার্তা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক এ সবের বদলে যে চড়, ঘুঁষি শুরু হল তাই তো পরবর্তী কালে মারণাস্ত্র হাতে তুলে নিতে শেখায়। এই যোগাযোগগুলি নিয়ে কতটা আলোচনা প্রত্যালোচনা হওয়া দরকার, দুর্ভাগ্য, আমাদের সমাজে এখনও তা হয়ে ওঠেনি। আশার কথা শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে শিশুকেন্দ্রিক চেতনার একটা ধারা বইতে দেখা গেছে। এই ধারণাকে কতটা জোরালো করে তোলা যাবে তার উপর আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করবে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/24/2020