আলিপুরদুয়ারের ধী গাঙ্গুলির কথা অনুযায়ী ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ/মাতৃভাষার মাধ্যমে পাঠদান — এই কথাগুলি সেখানে গুরুত্বহীন।’ একটি নৈতিকতার প্রশ্ন এখানে না তুললেই নয় — এই যে গ্রামের শিশুগুলি যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, বাড়িতে যারা সব সময় একটি অন্য ভাষায় কথা বলে তাদের ওপর জোর দিয়ে একটি অন্য ভাষা চাপিয়ে দেওয়া এ কি অন্যায় নয়? সরকার কি এ বিষয়ে একটু নরমপন্থী মনোভাব গ্রহণ করতে পারেন না? যাই হোক, মূল আলোচনার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকদের একটা অংশের মধ্যে চেষ্টা আছে। যে কয়েক জন শিক্ষক এই ভাষার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সমস্যাটি সমাধানের জন্য নিজস্ব কিছু উপায় বের করেও ফেলেছেন। কিন্তু তা-ও প্রশ্ন থেকেই যায়। এটাই কি একমাত্র পদ্ধতি? তা হলে কি নীতি-নির্ধারকরা এটা ধরেই নিয়েছেন যে শিক্ষকেরা প্রথমে অন্য ভাষাটি নিজেরা শিখে তার পর সেই ভাষায় শিশুগুলিকে পাঠ্য ভাষাটি শেখাবেন? সে ক্ষেত্রে শিশুদের মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় শিক্ষাদানের বিরুদ্ধে নীতিগত প্রশ্ন যদি নাও তোলা হয় তা হলে এটা কি ধরে নেওয়া হচ্ছে যে শিক্ষকেরা সব সময়ই অন্য ভাষাটি রপ্ত করতে সক্ষম হবেন। দেখা যাচ্ছে যে কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক কিন্তু ভাষা আয়ত্ত করতে সক্ষম হননি।
আলিপুরদুয়ারের সম্বিত পাল লিখেছেন :
‘শিক্ষকতার চাকরি পেয়েও ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করতে না পারায় প্রথম অবস্থায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কোনও ছাত্রছাত্রীই আমার কাছে আসত না। পরবর্তীতে আমি ভাষা আয়ত্ত করার চেষ্টা করি কিন্তু সফল হলাম না। ... মাতৃভাষার মাধ্যমে পাঠদান করতে পারিনি, ওরা সবাই — ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক প্রত্যেকেই আমাকে বাংলার মাস্টারমশাই বলে ডাকত।’
সুতরাং দেখা যাচ্ছে সমস্যা সমাধানের একমাত্র রাস্তা এটাই নয় যে শিক্ষক অন্য ভাষাটি শিখে নেবেন, যদিও সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন্য পন্থাও ভাবা দরকার।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020