শিক্ষার সঙ্গে স্বাস্থ্যের যোগটা নিবিড়। সুস্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাটা কিন্তু শিক্ষাদানেরই একটি অঙ্গ। গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বেশির ভাগ শিশুই আসে একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। দু’ বেলা দু’ মুঠো খাবারই তাদের জোটে না। তাই ধোপদুরস্ত হয়ে বিদ্যালয়ে আসাটা তাদের কাছে এক প্রকার বিলাসিতাই বলা চলে। যেমন এক জন শিক্ষক লিখছেন ছাত্রছাত্রীরা আসে খালি গায়ে। কারও পোশাক অপরিচ্ছন্ন। আমরা আশা করি না যে শিশুটি প্রতি দিন নতুন জামা পরে বিদ্যালয়ে আসবে। কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার ন্যূনতম প্রচেষ্টাটুকু তাদের শিখিয়ে দেওয়া যায়। এবং অনেক শিক্ষকই সেই কাজটি নিবিড় ভাবে করে চলেছেন। যেমন কোচবিহারের প্রীতম কুণ্ডু বলেছেন যে তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোজ পরিষ্কার হয়ে আসা, যেমন নখ কাটা, স্নান করা, চুল আঁচড়ানো এই অভ্যাসগুলি তৈরি করে দিতে পেরেছেন এবং ভুলবশত কোনও শিশু যদি অপরিষ্কার অবস্থায় আসে তবে তার বন্ধুরাই তাকে ধরিয়ে দিচ্ছে। আবার উত্তর দিনাজপুরের দেবব্রত ভট্টাচার্য লিখছেন :
‘দেখতে পেলাম ৮০ শতাংশ ছেলেমেয়ে প্রায় নোংরা বা পাচড়া বা বিভিন্ন রকম চর্মজনিত রোগে জরাজীর্ণ। শুরু হল আমার কর্ম। প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে কখনও বা মাঠে গিয়ে তাদের অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সচেতন করে প্রায় দেড় বছর ধরে এই কর্মপ্রয়াস চালিয়ে আসলাম। কর্মপ্রয়াসের শুরু হতে এখন পর্যন্ত উক্ত চর্মরোগগুলি দেখা যায় মাত্র ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে’।
এটা একটা বিরাট ব্যাপার। কিন্তু সেই সঙ্গে দরকার সরকারি ব্যবস্থাও। মালদার মতো কিছু জায়গায় আর্সেনিকের সমস্যা বেশি। এখানকার বিশ্বরূপ সরকার বলছেন ‘আর্সেনিক অধ্যুষিত অঞ্চল, তা সত্ত্বেও গ্রামের নলকূপই পানীয় জলের প্রধান ভসা। বর্তমানে গ্রামে পিএইচই–এর জলের পাইপলাইন ঢুকেছে। কিন্তু সব সময় জল পাওয়া যায় না। ফলেছাত্র ছাত্রীদের অনেকেই রোগে আক্রান্ত।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/4/2020