কাকদ্বীপের কর্মশালার শেখ আবদুল মোমিনের লেখাতেও সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেছেন যে নতুন পদ্ধতিতে পাঠদান করায় শিশুরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। তাদের মধ্যে কোনও প্রকার বিষয়ভীতিও তৈরি হচ্ছে না। বিশেষত বিষয়ভীতি থেকেই শিশু মনে ঐ বিষয়ের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। তাঁর কথা অনুযায়ী পূর্বে যে ভাবে পাঠদান করা হত তাতে শিক্ষকই ছিলেন মধ্যমণি। বর্তামানে সেই শিক্ষককেন্দ্রিক শিক্ষাদানই পরিণত হয়েছে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাদানে। যেখানে শিক্ষক শুধুমাত্র পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছেন আর শিশুরা যা শিখছে সকলই হাতে নাতে। বর্তমানে এই নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের জন্য সরকার থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে শিক্ষণ শিখন সামগ্রী (TLM) খাতে প্রতিটি শিক্ষক পিছু কিছু টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। এই টাকা থেকে শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে শিশুদের পড়াশোনার জন্য, সহজে বোঝানোর জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনে থাকেন যা এই নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের একটি অংশ বলা চলে। যেমন জলপাইগুড়ির মালা মুনশির লেখা থেকে একটু অন্য রকম অভিজ্ঞতা আমরা পেয়ে থাকি। তিনি বলেছেন :
‘শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি শিশুকে পূর্ণতা লাভ করতে সহায়তা করে বলে প্রকাশ করছি। আমার মনে হয়ে থাকে ও অভিজ্ঞতা থেকে জানাই, শিক্ষক, যিনি শিশুকে পাঠদান করেন তিনি বুঝবেন শিশুটির দুর্বলতা কোথায়। সেই দুর্বল জায়গাটি চিহ্নিত করে ও কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে পাঠদান করলে সে বুঝতে পারবে সেটা যিনি পাঠদান করেন তিনিই বুঝতে পারেন। এবং নিজেই নিজের চিন্তা শক্তি দিয়ে, কৃত কৌশল নিরূপণ করে পাঠদান করবেন। শিক্ষক নিজে ও তার আশেপাশে যা আছে সেটাই প্রধান TLM বলে আমি মনে করি।
শিক্ষকদের লেখা অনুযায়ী শিখন পদ্ধতির ব্যবহার শিশুদের কাছে বিশেষ চিত্তাকর্ষক। অনেক কম সময়ের মধ্যে শিখন সামগ্রী ব্যবহার করে শিশু তার পাঠ্যপুস্তকের পড়াটি বুঝতে পারে। তবে শিক্ষকেরা এ কথাও বলেছেন যে সকল ক্ষেত্রে এই TLM ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। আবার TLM ছাড়া সকল শিক্ষা সম্ভব নয় — এ কথাও সঠিক নয়। মুর্শিদাবাদের বৈকুণ্ঠ মল্লিক বলছেন, ‘একটার পর একটা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে করতে সফল হই। শিখনে TLM-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে সবেতেই TLM চাই, TLM ছাড়া শিক্ষা সম্ভব নয় — এই ধারণাও ভুল। উপযুক্ত TLM নির্ণয় করা একান্ত প্রয়োজন।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/21/2020