পোশাকের অভাবে এক দিকে যেমন অনুপস্থিতি দেখা যাচ্ছে তেমনি পোশাক শিশুদের মধ্যে বৈষম্যেরও সৃষ্টি করে। ১৫ জন শিক্ষকের কথায় এটি আলোচিত হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার কালিচুনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন এ কে কিউ এম ভি কবীর হোসেন। তাঁর কথায় :
‘শিশুদের মন বড় আবেগপ্রবণ। অল্প আঘাতে ভেঙে পড়ে। আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে শিশুটি ময়লা ছেঁড়া জামা পরে আসে সে প্রতি দিন দেখে তার পাশের বাড়ির শিশুটি সুন্দর স্কুল ড্রেস পরে স্কুল বাস-এ চেপে প্রাইভেট স্কুলে যায়। এর ফলে আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেটির মনে কিছুটা হলেও হীনমন্যতা জন্ম নেয়। শিক্ষা নেওয়ার আগ্রহ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
বেসরকারি স্কুল নিয়ে চার দিকে একটা তোলপাড় চলছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি না করে বেসরকারি স্কুলে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন। বেসরকারি স্কুলে নাকি পড়াশোনা ভালো হয়। বেসরকারি স্কুলের চাকচিক্য তাঁদের আকর্ষণ করে। স্কুল ড্রেস শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আসার ঝোঁক বৃদ্ধি করে। এমনটাই জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক।
একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র ছাত্রীদের পোশাক দেওয়া হত। বঞ্চিত হত ছাত্ররা। বৈষম্য তৈরি হত তাদের মধ্যে। তার পর পোশাক দেওয়াটা বন্ধ হয়ে গেল। পোশাক ছাড়াই আসত ছাত্রছাত্রীরা। এখন আবার সর্ব শিক্ষা মিশন থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পোশাকের জন্য ৪০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকেই গেল। তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি ছাত্র এবং সকল ছাত্রীকে পোশাক দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ স্তরের ছাত্ররা তা হলে কী দোষ করল? এখানেই তো আবার বৈষম্য তৈরি করে দেওয়া হল। শিক্ষকদের মনে আঘাত করছে এই প্রশ্নটা। সরকারি কর্মকর্তারা পোশাক চালু তো করে দিলেন, কিন্তু রেখে দিলেন সেই বৈষম্যটা। সাথে সাথে ৪০০ টাকা যে দু’সেট জামার জন্য খুব কম সেই কথাটাও উঠে আসছে শিক্ষকদের কথায়। এই বিষয়টার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সরকারি নীতিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/16/2019