ডান দিক থেকে বাঁ দিকে

ছাত্রছাত্রীরা প্রথম শ্রেণিতে যারা পড়ে তারা হাতের লেখা খাতার ডান দিকে থেকে বাঁ দিকে দাগ টেনে লেখে। অথচ শেখানো হয় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে দাগ টেনে টেনে। অনেক অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি যে, তারা যখন সকালবেলা মসজিদে আরবি পড়তে যায় তখন আরবি ডান দিক থেকে বাঁ দিকে পড়তে ও লিখতে হয়। এই সমস্যা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রবল আকারে দেখা যায়। গ্রামে ভি ই সি আছে। তারা এই সমস্যা সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ কমই করেন। আগ্রহ দেখা যায় বিদ্যালয়ে ঘর নির্মাণের জন্য কোনও অর্থ মঞ্জুর হয়েছি কি না। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের যিনি সচিব তাঁর বাড়িতে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ব্যবস্থা করেছেন। অনেকের কাছে শুনেছি তিনি বলে থাকেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন হয় না। এক জন ভি ই সির সভাপতি এবং পঞ্চায়েত মেম্বার যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলে থাকেন সাধারণ মানুষের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষকরা নাকি সরকারের পার্টি কর্মী। এই ধরনের অপবাদও আমাদের শুনতে হয়।

বিদ্যালয়ে আমরা যখন বর্ষার সময় যাতায়াত করি, সে সময় রাস্তায় এত কাদা থাকে যে সাইকেল অন্যত্র রেখে হেঁটে আড়াই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করি। গ্রাম বাংলার রাস্তাঘাট এখনও কাদাভর্তি, বিদ্যালয় পর্যন্ত যাতায়াত করা যায় না। এই অবস্থার কথাটি সরকারের জানা উচিত। আড়াই কিমি পথ বৃষ্টিতে ভিজে এলে বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন কাজে অসুবিধা হয়ে পড়ে।

আমি শিক্ষক, আমি চাই শিশুরা পঠনপাঠনের মাধ্যমে বৃহত্তর জগতে প্রবেশ করুক। সহযোগিতা চাই পিতামাতার। তাঁরা আমাদের কাজে সহযোগিতা করুন এই আশা রাখি।

আমার আর একটি সমস্যা মনে হয় তা হল, বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষ যা আমার বিদ্যালয়ে নেই। একটি ঘরের মধ্যে দু’টি শ্রেণি পঠনপাঠনে শিশুদের মন সংযোগ করতে অসুবিধে হয়। অথচ সর্ব শিক্ষা মিশন ছাত্র অনুযায়ী ঘরের সমস্যা মিটিয়ে থাকেন। প্রতিটি শ্রেণির জন্য পৃথক শ্রেণিকক্ষ থাকলে সব চেয়ে ভাল হয়।

আর একটি সমস্যার কথা বলি — আমরা শিক্ষক। আমরা ছাত্রছাত্রীদের সামনে চেয়ারে পা দুলিয়ে বসি আর সামনে টেবিল থাকে অথচ যাদের জন্য শিক্ষকতা করে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সুখ ভোগ করি তারা আমাদের পায়ের কাছে বসে থাকে, বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলের চটের উপর। তাদের যদি বেঞ্চ এবং হাইবেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয় তা হলে অনেক ভাল হয়।

সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২