শিক্ষক হিসাবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে শুরু করি ২০০০ সাল থেকে। আমার প্রথম বিদ্যালয় জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত ধূপগুড়ির একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। বাকিদের অর্ধেক ছিল তফশিলি জাতি/জনজাতি শ্রেণির মানুষ। আঞ্চলিক ভাষা ছিল সেই বিদ্যালয়ে আমার প্রথম এবং প্রধান সমস্যা। শিশুরা যে ভাষায় নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারত সেই ভাষা আমার কাছে বোধগম্য হত না। একই ভাবে শিশুদেরও ঐ একই সমস্যা। আমি যে ভাষায় কথা বলতাম, যে ভাষায় ওদের পাঠদান করতাম, তা ওদের বোঝার আয়ত্তের বাইরে ছিল। গোড়ার দিকে এই সমস্যাটা কিছু দিন থাকার পর প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় সহ শিক্ষকদের সাহায্যে আমার ভাষাগত সমস্যা কিছুটা দূর হয়। আমার নিজের ভাষা সমস্যা তো মিটল। কিন্তু শিশুদের কথ্য ভাষা ও বই-এর ভাষার মধ্যে সেতুবন্ধন করা তো এক দুরূহ ব্যাবার। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমি প্রত্যহ শিশুদের গল্প বলতে শুরু করি। এই গল্পের অর্থ বোঝার জন্য শিশুদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব উৎসাহ পর্যবেক্ষণ করি। প্রথম প্রথম আমি শিশুদের কথ্য ভাষায় কিছু কিছু বিষয় অনুবাদ করে বোঝাই এবং ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনি। এই ভাবে মাস চারেক চলার পর লক্ষ করি ৭৫ শতাংশ শিশুর মধ্যে পাঠ্যবই-এর ভাষা অনুধাবনের ক্ষমতা জন্মেছে। একই ভাবে এই পদ্ধতি আমি প্রথম শ্রেণিতে প্রয়োগ করে দেখি সাফল্য আসে। এর পর অনুপস্থিতির সমস্যা। সেটাও দূর করতে গল্প বলা এবং অবশ্যই মিড ডে মিল সাহায্য করেছে। অপ্রাসঙ্গিক হলেও উল্লেখ না করে পারছি না হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সেই গ্রামে ছিল এক উল্লেখযোগ্য বিষয়।
আমার শিক্ষকতা জীবনের আর একটি উপলব্ধির কথা বলি। আমি দেখেছি, শিশুদের বাংলা অপেক্ষা ইংরেজি অক্ষর পরিচিতি হয় তাড়াতাড়ি। শিশুরা A B C D যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ এবং আত্মস্থ করতে পারে, অ আ ক খ তত সহজে পারে না। এ নিয়ে অবশ্য বিস্তর আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/24/2019