ভাদসা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়টি পুরুলিয়া গ্রামীণ ৩ নং চক্রের অন্তর্গত ভাদসা গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটির ভৌগোলিক অবস্থানটা গুছোনো নয়, ছাড়া ছাড়া ৩/৪টি পাড়া নিয়ে গ্রাম। ২৫ – ৩০ শতাংশ তফশিলি জাতির মানুষের বাস। সেখানে একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে, যার ছাত্র সংখ্যা ৬৪ জন। দুই জন সহায়িকা আছেন। প্রাথমিক স্কুলের ঢঙে কেন্দ্রটি চলে। যে হেতু এদের বেশির ভাগ শিশু তফশিলি জাতি, একটা সময় অধিকাংশ শিশু মা বাবার সাথে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যায় (ইটভাটায়), যার ফলে শিক্ষায় ভাটা পড়ে। কিন্তু এই বিষয়ে গ্রামের এক জন নাগরিক হয়ে আমাদের করার কিছু থাকে না।
গ্রামে আরও ১২/১৪টি পরিবার আছে যাদের পেশা ভিক্ষা করা। এদের সাথে যোগাযোগ করেও এদের বাচ্চাদের এক জনকেও এখনও স্কুলমুখী করতে পারা যায়নি। বিদ্যাসাগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটা স্কুল চালু ছিল, বর্তমানে সেটাও বন্ধ।
আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে যা লক্ষ করেছি তা লিপিবদ্ধ করছি।
প্রথমত, গ্রামের ভিতরে স্কুল। স্কুলের বাউন্ডারি নেই; যার জন্য গ্রামে যাই ঘটনা ঘটুক স্কুলের ভিতরে তার একটা প্রতিফলন পড়ে অর্থাৎ পড়ুয়ারা হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসে, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে থাকলেও। লক্ষ করা যায় তাদের চোখ বাইরে চলে গেছে। গ্রামে এখনও প্রচুর পরিবার আছে যাদেরকে আমরা প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া হিসেবে স্কুলে নিয়ে এসেছি, কিন্তু অভিভাবকদের পড়াশোনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকায় শিশুরা স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। এই ধরনের বিষয়গুলো আমার স্কুলে এবং শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত করতে পারি না। অনেক দিন ধরে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত থাকায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অভিভাবকদের কাছে আলোচনার জন্য গেলেও এই সমস্যা থেকে বার হওয়ার কোনও সদুত্তর বের করতে পারিনি। আমরা লক্ষ করেছি, যে সকল শিশু নিয়মিত স্কুলে হাজির থাকে এবং যে সব পরিবারের অভিভাবকরা শিক্ষিত ও সচেতন তাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভালো পড়াশোনা করে। শিক্ষকদের সাথে সাবলীল ভাবে তাদের সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বলে, বাড়িতে বা স্কুলে আসার সময় কোথায় কী দেখল সে সম্পর্কেও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে। শ্রেণিকক্ষে কাজ করতে গিয়ে কোথাও আটকে গেলে শিক্ষকদের কাছে জায়।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2020