ক্লাস নাইন টেন পর্যন্ত পড়ুয়ারা যে অঙ্ক শেখে সেটা একেবারেই বুনিয়াদি গণিত। হায়ার সেকন্ডারিতে ছেলেমেয়েরা যে অঙ্ক করে, সেটাকে হায়ার ম্যাথেমেটিক্স-এর গোড়ার কথা বলে ধরা যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, অধিকাংশ ছেলেমেয়েই বিষয়টা ক্যালকুলেশনের স্তর থেকে দেখে। বিষয়টা বুঝতে গেলে, শুধু কী ভাবে অঙ্ক সল্ভ করা যায়, তা জানলে হবে না। তুমি হয়তো লিমিটের অঙ্ক খুব ভালো করতে পারো, কিন্তু লিমিট বলতে কী বোঝায়, সেটা তোমার ভালো করে জানা নেই। অঙ্ক জানতে হলে, তোমাকে তার থিয়োরিটাও ভালো করে জানতে হবে। তবেই তুমি ‘ঠিকমতো’ অঙ্ক শিখতে পারবে, জানতে পারবে।
আর, শুধু ভালো নম্বর পেলেই স্নাতক স্তরে অঙ্ক নিয়ে পড়তে এসো না। তোমাকে বুঝতে হবে, বিষয়টা তোমার ভালো লাগে কি না, তুমি অঙ্ক-পাগল কি না। অনেক ছেলেমেয়েই অঙ্কে ভালো নম্বর পায়। কিন্তু সত্যি সত্যি সে কতটা বুঝে অঙ্কটা করেছে, সেটা হয়তো সে নিজেও ভালো করে জানে না। হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত যে ধরনের প্রশ্ন আসে, তার অধিকাংশই হয়তো বছর বছর ঘুরে ফিরে আসছে। এ সব প্রশ্ন অনেকাংশেই তথ্যভিত্তিক। মানে, দশটা অঙ্ক কষলে, তার টেকনিক মেনে আরও দশটা অঙ্ক কষে ফেলা যায়। পড়ুয়াদের সত্যিকারের জ্ঞান যাচাই করার পক্ষে এ একেবারেই উপযুক্ত না। যার কনসেপ্ট পরিষ্কার, সে যে কোনও অঙ্ক করতে পারবে। তুমি ক্যালকুলেশনে ভালো হতে পারো, কিন্তু ক্যালকুলেশন অঙ্কের একটা অংশ মাত্র। উচ্চ স্তরের অঙ্ক কিন্তু অনেক বেশি অ্যাবস্ট্রাক্ট বা গভীর ধারণার কারিকুরি। বিষয়টা না বুঝলে এক সময় অঙ্ক নিয়ে পড়তে ভালো লাগবে না।
স্কুল পর্যন্ত বিজ্ঞানের অন্যান্য সাবজেক্টের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের এমনিতেই অঙ্ক পড়তে হয়। টেক্সট বইতে যে ধরনের এক্সারসাইজ থাকে, তারা সাধারণত সেগুলোই সল্ভ করে। সঙ্গে আরও কিছু রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নেয়। কিন্তু যখন একটি ছাত্র বা ছাত্রী কলেজে ঢুকছে, শিক্ষক ধরেই নেন, পড়ুয়াটি তার প্যাশন থেকেই অঙ্ক পড়তে আসছে। সে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যা শিখেছে, সেই জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সে উচ্চতর পড়াশোনার দিকে এগোবে। এখানে কিন্তু শিক্ষক তোমায় ক্লাসে একটা বিষয় পড়িয়ে, সেই অধ্যায়ের পাঁচটা অঙ্ক করিয়ে তোমাকে বাকিগুলো হোমটাস্ক দিয়ে দেবেন না। তিনি বিষয়টা পড়িয়ে দেবেন, হয়তো দু-চারটে বইও রেফার করে দেবেন। কিন্তু তোমাকে নিজের উদ্যোগে আরও পাঁচটা বই ঘাঁটতে হবে কমসেপ্ট পরিষ্কার করতে। মোট কথা, ক্লাসে যা পড়ানো হবে, শিক্ষক যা রেফারেন্স দেবেন, তাতেই আটকে থাকলে চলবে না। আর স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে, তুমি একটা না একটা সময় আটকে যাবেই। বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে হবে।
দেখবে, অঙ্কের কোনও একটা বিষয়ের উপরেই নানান ব্যক্তি বিভিন্ন দিক আলোচনা করে বই লিখেছেন। কেন ? কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি পড়ে তাঁদের মনে এমন কিছু ধারণা এসেছে, যা আগে কারও আসেনি। কোনও বিষয়ের উপর নানান বই পড়লে, তা তোমাকে নানা ভাবে ভাবতে সাহায্য করে। বিষয়ের উপর তোমার দখলকে আরও মজবুত করে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রস্তুতি, ১৭ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020