শিশুবয়স থেকেই গণিতে কী করে চিন্তা করতে হয় শেখানো দরকার। অবশ্যই সেটা শিক্ষকের একমাত্র করণীয়। গণিত, সাল—তারিখ মনে রাখার বিষয় নয়। ঠিক ভাবে চিন্তা করতে পারাটাই গণিতে আসল। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ত্রিভুজের তিনটি কোণের পরিমাপের সমষ্টি কত ? সঙ্গে সঙ্গে তারা উত্তর দেবে, ১৮০o। ১৮০o-এর বেশি নয়, কমও নয়। ১৮০o কেন ? না, তাদের কাছে এর কোনও জবাব নেই। থাকারও কথা নয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি শেখানো হয় অষ্টম শ্রেণিতে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে এ ধরনের স্মৃতিশক্তির চর্চাকে গণিতচর্চা বলা যায় না। গণিতে যত দিন না স্মৃতিশক্তির চর্চা থেকে সরে এসে চিন্তাশক্তির চর্চায় শিশুকে মনোনিবেশ করানো যাচ্ছে তত দিন গণিতভীতি থাকবেই। যুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গাণিতিক সত্যের মূল। আদিজ্ঞান। গণিতের ভাষায় তাকে বলা হয় স্বতঃসিদ্ধ (axiom)। এর প্রয়োগের আগে কয়েকটা ধাপ পেরিয়ে আসতে হয় সকলকে। পর্যবেক্ষণ থেকে অনুমান (conjecture)। অনুমান থেকে বিশ্বাস। বিশ্বাস থেকে অনুসন্ধান। অবশেষে স্বতঃসিদ্ধতার প্রয়োগে যুক্তি সাজিয়ে গাণিতিক সত্য বা মিথ্যার প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার্থীকে এই পথ অনুসরণ করাতে পারলে তবেই হবে আসল গণিতচর্চা। এই চর্চা চলতে থাকলে শিক্ষার্থী নিজেই সত্য প্রতিষ্ঠা করবে, হোক না তা পূর্ব প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষার্থী নতুন সৃষ্টির আনন্দ অনুভব করবে। তখন তাদের যে অনুভুতি হবে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তা তাঁর ‘পথের পাঁচালী’-তে লিখলেন, ‘আমি যেখানে আর কখন যাই নাই, আজ নতুন পা দিলাম, যে নদীর জলে নতুন স্নান করিলাম, যে গ্রামের হাওয়ায় শরীর জুড়াইল, আমার আগে সেখানে কেহ আসিয়াছিল কিনা, তাহাতে আমার কি আসে যায় ? আমার অনুভূতিতে তাহা যে অনাবিষ্কৃত দেশ। আমি আজ সর্বপ্রথম মন, বুদ্ধি, হৃদয় দিয়া উহার নবীনতাকে আস্বাদ করিলাম যে !’
সূত্র : আধুনিক গণিত অন্বেষা, গণিতভীতি সংখ্যা, ২০১২।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020