পান্নালাল ভট্টাচার্য (১৯৩০-১৯৬৬) ছিলেন এক জন বিখ্যাত গায়ক। তিনি শ্যামাসঙ্গীতের গায়নরীতিতে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি আরেক বিখ্যাত গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ছোট ভাই। মূলত গীতিকার রামপ্রসাদ সেন এবং কমলাকান্ত ভট্টাচার্য রচিত গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন পান্নালাল। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে এই খ্যাতনামা গায়ক আত্মহত্যা করেন। তাঁর গান আজও হিন্দু বাঙালি সমাজে অত্যন্ত পরিচিত।
তাঁর শৈশব সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। ১৯৪৭ সালে বিখ্যাত গায়ক সনৎ সিংহের সঙ্গে গান গাওয়া শুরু করেন পান্নালাল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর। শুরুতে কণ্ঠ অপরিণত থাকার যুক্তিতে এইচএমভি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। তার পর তিনি মেগাফোনে গান গাওয়া শুরু করেন। প্রথম দিকে পান্নালাল আধুনিক বাংলা গান গাইতেন। তার পর সনৎ সিংহের এক বন্ধু পান্নালালকে দিয়ে প্রথম হিট শ্যামাসঙ্গীতটি গাওয়ান। সেটি ছিল, ’আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলই ফুরায়ে যায় মা...’। এই গানটি আজও ক্লাসিক হিসেবে বাঙালি সমাজে সমাদর পায়।
যদিও ‘আমার সাধ না মিটিল’ গানটি পান্নালালের প্রথম রেকর্ড করা শ্যামাসঙ্গীত নয়। এর আগে তিনি বেশ কিছু শ্যামাসঙ্গীত রেকর্ড করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল, ‘আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে’, ‘তুই নাকি মা দয়াময়ী’, ‘তুই যে কেমন দয়াময়ী’, ‘সকলই তোমারই ইচ্ছা’, ‘আমায় দে মা পাগল করে’, ‘মুছিয়ে দে মা আমার এ দুটি নয়ন’ ইত্যাদি। ভক্তিরস সিঞ্চিত গায়কির একটি ধরন পান্নালাল তৈরি করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠের বিশেষ চরিত্র এবং ভক্তিভাব বাংলার অসংখ্য কালীভক্তের মন জয় করে নেয়। তিনি নিজেও কালীভক্তে পরিণত হয়েছিলেন এবং সর্বদা সেই ভাবনার জগতেই থাকতেন।
জীবনের শেষ দিনগুলিতে পান্নালাল কোনও কারণে সব সময়ই বিষণ্ন থাকতেন। এর কারণ নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায় না। ১৯৬৬ সালের ২৭ মার্চ তাঁদের কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে পান্নালাল আত্মহত্যা করেন।
তাঁর প্রথম শ্যামাসঙ্গীতের অনুষ্ঠান থেকে পান্নালাল ভক্ত ও শ্রোতাদের মনে যে স্থায়ী আসন দখল করেছিলেন, তা আজও অটুট রয়েছে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/12/2020