সংগীত ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংগীত ভালো লাগে যেমন, ঠিক তেমনই ভালো লাগে সেই মানুষটিকে যাঁর দ্বারা সৃষ্টি হয়।
এমনই এক জন মোজার্ট। পুরো নাম উলফগাং আমাদিউস মোৎসার্ট। সংগীতের প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। তাঁর সংগীতজ্ঞান ছিল মুগ্ধ করার মতো।
মাত্র ৩ বছর বয়সে শিশু মোৎসার্ট পিয়ানো বাজাতে শুরু করে। অন্য শিশুদের মতো তাঁরও ছিল সব কিছুর প্রতি অসীম কৌতূহল। তাই শৈশবেই মোৎসার্টকে সংগীতের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে দু’ বার বলতে হয়নি। তাঁর কান ছিল অতি মাত্রায় স্পর্শকাতর। তাই অনায়াসে ৮ বছরের বালক মোৎসার্টকে বেহালার তারে সুর তৈরিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। উলফগাংয়ের পিতা দুই বেহালায় বা স্ট্রিং কোয়ার্টেটে গীত সংগীত বাজাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বাড়িতে তিনি এক দিন কোয়ার্টেট বাজাতে মনস্থ করলেন। কিন্তু সে দিন অন্য বেহালাবাদক ছিলেন অনুপস্থিত। তাই তাঁর স্থানে বহাল হল ৫ বছরের তরুণ মোৎসার্ট। মোৎসার্ট তখনও কোয়ার্টটেটের সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত। তবুও তিনি এক জন পেশাদার বেহালাবাদকের মতোই কোয়ার্টেটে অংশ নিলেন। যেন কয়েক সপ্তাহ রেওয়াজ করেছেন। পুত্রের এমন আশ্চর্য সংগীত প্রতিভা দেখে মোৎসার্টের পিতা ও উপস্থিত শিল্পীরা দারুণ বিস্মিত হলেন। শৈশব থেকেই মোৎসার্ট পেশাদার সংগীতশিল্পীদের মতো সুর তৈরিতে মেতে ওঠে। মাত্র ৫ বছর বয়সে মোৎসার্ট পিয়ানোতে ২ মিনিটের সুর সংযোজন করে। ৭ বছর বয়সে লিখে ফেলেন বিখ্যাত সোনাটা। তার পর মোৎসার্ট একটি পূর্ণাঙ্গ সিম্ফনি রচনা করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৮ বছর।
মোৎসার্টের পিতার ছিল সংগীতের জগতে অবাধ বিচরণ। তাই সংগীতের তীর্থভূমি ইউরোপ ভ্রমণে তাঁর সফরসঙ্গী হন তরুণ মোৎসার্ট। গানের আসরে যুবক মোৎসার্টের মর্মস্পর্শী সুরে ইউরোপের বড় বড় সংগীতশিল্পী পর্যন্ত বিস্ময়াভূত হয়ে যান। মোৎসার্টের গীত সুরকে মনে হয় যেন দৈববাণী। শ্রোতারা সুরের আবেশে মাতোয়ারা হয়ে যায়। কোনও সুর এক বার শুনেই তিনি পেশাদার সংগীতজ্ঞের মতো অবিকল বাজাতে পারতেন। মোৎসার্ট সংগীত যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে মোটেই ভাবিত ছিলেন না। তিনি যে কোনও তারেই অন্ধের মতো সুরের ঝংকার তুলতেন। মোৎসার্ট জটিল সুরকেও সহজে আয়ত্ত করতে পারতেন। তার পর কয়েক ঘণ্টা বা দিনব্যাপী অনুশীলনে এক জন প্রথম সারির শিল্পীর মতো নির্ভুল ভাবে বাজাতেন। রোমে এক বার পবিত্র সপ্তাহ উদযাপনকালে পোপের গায়কবৃন্দ গ্রিগরিও এলিগরির ধর্মীয় সংগীত মিসরিরি পরিবেশন করেন। তখন থেকেই পোপের অনুমতি ব্যতিরেকে বিশ্বের কোনও স্থানে এর প্রদর্শন নিষিদ্ধ ছিল। এর পর পোপ সরকারের এক আদেশে বলা হয়, এ পবিত্রকর্মের কোনও দর্শন বা পরিবেশনকারী ব্যক্তিকে শাস্তিস্বরূপ ধর্ম সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করা হবে। মিসরিরি হলও এক ধরনের সুদীর্ঘ ও জটিল ধর্মসংগীত। মোৎসার্ট এটি গীতকালে মাত্র এক বারই শুনেছিলেন। তিনি ঘরে ফিরে স্মৃতির পুরোটাকেই সংগীতে রূপান্তর ঘটান। পোপ মোৎসার্ট সংগীত প্রতিভায় পরম বিস্মিত হন। প্রতিদানে তিনি বালক মোৎসার্টকে অভিশাপের পরিবর্তে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘ক্রস অব দ্য অর্ডার অব দ্য গোল্ডেন স্পার’-এ ভূষিত করেন। ১৭৯১ সালে সংগীত জগতের বিস্ময়কর প্রতিভা উলফগাং আমাদিউস মোৎসার্টের কর্মমুখর জীবনের সমাধি ঘটে। মোৎসার্ট তাঁর কর্মময় সংগীতজীবনে বিশ্বের সংগীতানুরাগীদের জন্য রেখে যান ৬০০ অপেরা, নাতিদীর্ঘ অপেরা, পিয়ানো ও স্ট্রিং কোয়ার্টেটের অর্কেস্ট্রা, বেহালার সোনাটা, সেরিনেইডস, মোটেটস, মাসেস সহ অনেক ধরনের সংগীত। সংগীত জগতে মেধাবী মোৎসার্ট কেবল ৩৫ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর সিম্ফনিগুলো আজও কনসার্টে, অর্কেস্ট্রায় সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে। সুরস্রষ্টা মোৎসার্ট নিজের হাতে লেখা একটি ‘মিউজিক স্কোর’ সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে পশ্চিম ফ্রান্সের নাঁতেস পাঠাগার থেকে। সুরটি ১৭৮৭ সালের পরে কোনও এক সময়ে করা।
সুত্রঃ পোর্টাল টিম দ্বারা সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019