শ্রীনিবাস রামানুজন (ডিসেম্বর ২২, ১৮৮৭ – এপ্রিল ২৬, ১৯২০) অসামান্য প্রতিভাবান এক জন ভারতীয় গণিতবিদ। খুব অল্প সময় বাঁচলেও তিনি গণিতে সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন।
প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা ও আবৃত্ত ভগ্নাংশ শাখায়, গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া নোটবুক বা ডায়েরি হতে পরবর্তীতে আরও অনেক নতুন সমাধান পাওয়া গেছে। ইংরেজ গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি রামানুজনকে অয়েলার ও গাউসের সমপর্যায়ের গণিতবিদ মনে করেন। অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজের এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান রামানুজন ১০ বছর বয়সে গণিতের সঙ্গে পরিচিত হোন। তাঁকে এস এল লোনি লিখিত ‘ত্রিকোণমিতি’ পুস্তকটি দেওয়া হয় এবং তখন থেকে তিনি গণিতে সহজাত প্রতিভা প্রদর্শন করেন। ১২ বছরের মধ্যে তিনি ঐ পুস্তকের বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করেন। এমনকী তিনি নিজে কিছু উপপাদ্য আবিষ্কার করেন এবং স্বতন্ত্র ভাবে অয়েলারের এককত্ব পুন:আবিষ্কার করেন। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি গণিতে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়ে পুরস্কার ও প্রশংসা লাভ করেন। ১৭ বছর বয়সে রামানুজন বার্নোলির সংখ্যা ও অয়েলার-মাসেরনি ধ্রুবকের ওপর নিজের গবেষণা সম্পন্ন করেন। কুম্বাকোটম সরকারি কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তি পেলেও অ-গণিতীয় বিষয়ে ফেল করার কারণে তাঁর বৃত্তি বাতিল হযে যায়। এর পর তিনি অন্য একটি কলেজে নিজের গাণিতিক গবেষণা শুরু করেন। এই সময় জীবন ধারণের জন্য তিনি মাদ্রাজ বন্দর ট্রাস্টের মহা হিসাবরক্ষকের কার্যালয়ে কেরানি পদে যোগ দেন। কিন্তু তাঁর গবেষণাকর্ম এ সবের জন্য কখনও ব্যাহত হয়নি।
পোর্ট ট্রাস্টে কাজ করার সময় কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় যাঁরা নোটবুক নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেন। এর সূত্র ধরে গণিত বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ১৯১১ সালে তাঁর প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ ‘জার্নাল অফ দ্য ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সংখ্যাতত্ত্বের উপর তাঁর গবেষণালদ্ধ ‘সাম প্রপার্টিজ অফ বারনৌলিস নাম্বারস’ নামে তাঁর প্রথম দীর্ঘ প্রবন্ধ একই বছর প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে একই পত্রিকায় তাঁর আরও দু’টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং সমাধানের জন্য কিছু প্রশ্নও প্রকাশিত হয়।
রামচন্দ্র রাও মাদ্রাজ প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ের মি. গ্রিফিথ-কে রামানুজনের ব্যাপারে বলেন। মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান স্যার ফ্রান্সিস স্প্রিং-এর সঙ্গে মি. গ্রিফিথ এর আলাপ হওয়ার পর থেকেই রামানুজনের প্রতিভার স্বীকৃতি শুরু হয়। মাদ্রাজ শহরের বিশিষ্ট পণ্ডিত শেশা আইয়ার এবং অন্যদের পরামর্শে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জি এইচ হার্ডির সঙ্গে রামানুজন যোগাযোগ শুরু করেন এবং তাঁর বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি পত্র লেখেন। এই পত্রের সঙ্গে ১২০টি উপপাদ্য সংযোজিত ছিল, তার ভিতর থেকে নমুনাস্বরূপ হার্ডি ১৫টি নির্বাচন করেন। তিনি এমন কিছু বিষয় ও সমস্যার উপস্থাপনা করেছেন যা ইউরোপের অসামান্য প্রতিভাধর বিজ্ঞানীরা ১০০ বছর ধরে সমাধান করেছেন, এমনকী কিছু এখনও সমাধান হয়নি।
অনেক দিন যাবৎ হার্ডি রামানুজনকে কেমব্রিজ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রামানুজনের অনেক বন্ধু ও হিতৈষীর চেষ্টায় ১৯১৩ সালের মে মাসে মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের কেরানির দায়িত্ব থেকে তাঁকে মুক্ত করা হয় এবং একটি বৃত্তি মঞ্জুর করা হয়। ঠিক এমনি সময়ে তিনি কেমব্রিজ থেকে তিনি একটি আমন্ত্রণ পান। কেমব্রিজ-এর আমন্ত্রণে বিদেশে আসার অল্প দিন পরই রামানুজন ট্রিনিটি কলেজের ফেলোশিপ পেয়ে যান। এই সময় মাদ্রাজ থেকে প্রাপ্ত বৃত্তির পরিমাণ ছিল বার্ষিক ২৫০ পাউন্ড; তার ৫০ পাউন্ড দেশে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য দিতে হত। এ ছাড়া ট্রিনিটি কলেজ থেকে ভাতা বাবদ ৫০ পাউন্ড পেতেন।
গণিত ক্ষেত্রে, পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রামানুজন এমন অনেক গাণিতিক সূত্রের উদ্ভাবন করেন যেগুলো বহু কাল পরে প্রমাণ হয়। প্রমাণ করতে গিয়ে গবেষণার অনেক নতুন দিকের সূচনা হয়। রামানুজন ‘’-এর অনন্ত ধারা উদ্ভাবন করেন।
রামানুজনের উদ্ভাবনসমূহ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। রামানুজনের নিজের মৌলিক উদ্ভাবনসমূহ এবং হার্ডির সাথে তাঁর গবেষণার ফসলসমূহ নিম্নরূপ--
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে :
সুত্রঃ পোর্টাল টিম দ্বারা সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020
শ্রীনিবাস রামানুজন (ডিসেম্বর ২২, ১৮৮৭ – এপ্রিল ২৬,...