জীবমণ্ডলের স্থলভাগে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে বোঝায় অজস্র গাছপালা ঢাকা সবুজ তৃণভূমি বা বনভূমি, যেখানে উদ্ভিদের সংখ্যা প্রাণীদের তুলনায় অতি বিপুল এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী যেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য ও আশ্রয় পেয়ে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে।
বিগত দু’ শতকে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের হাতে উদ্ভিদ ও প্রাণীসহ ক্রমবর্ধমান হারে বিশাল অরণ্য ভূমির অবলুপ্তি এবং জলভূমির বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয়ের ফলে জীবমণ্ডলের ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়।
পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর ০.৯ শতাংশ ক্রান্তীয় বনভূমি অবলুপ্ত হচ্ছে। গত শতাব্দীর মধ্যভাগের পর থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ক্রান্তীয় অরণ্য ধ্বংস হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত অপসৃয়মাণ অরণ্যের যে ছবি পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে বলা হয়, পৃথিবীতে প্রতি বছর ১.৭ থেকে দু’ কোটি হেক্টর অরণ্য অদৃশ্য হচ্ছে। আরও সহজ করে বলা যেতে পারে, প্রতি মিনিটে চারটি ফুটবল মাঠের আয়তনের সমান অরণ্য পৃথিবী থেকে চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো অঞ্চলে বনাঞ্চল জনসংখ্যার চাপে দ্রুত সঙ্কুচিত হচ্ছে।
সামাজিক বনসৃজন : অরণ্যের এ ক্রমবর্ধমান অবক্ষয় রোধের জন্য ভারতব্যাপী বেশ কিছু সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
অরণ্যের ব্যাপক অবক্ষয়ের ফলে পৃথিবীতে বিশালসংখ্যক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির জীবন আজ বিপন্ন, তাদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে, তারা অবলুপ্তির পথে চলেছে। প্রাণীদের মধ্যে পাখি, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীদের জীবন বেশি বিপন্ন অন্যান্য পর্বের প্রাণীদের থেকে। পৃথিবীতে অতি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল, সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ অথবা শীতল তুন্দ্রা অঞ্চলে এমন কিছু বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে, পৃথিবীর অন্য কোথাও যাদের দেখা পাওয়া যায় না, এদের ‘এন্ডেমিক’ জীব বলে। যেমন, হিমালয়ের তুষার চিতা, ব্রহ্মকমল, নীল অর্কিড, তুন্দ্রা অঞ্চলে ভালুক (পোলার বিয়ার) বা গ্যালাপাগোস দ্বীপের উভচর সরীসৃপ ইগুয়ানা। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এমন অনেক প্রজাতির এন্ডেমিক উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। এদের বাস্তুতন্ত্র আজ বিপন্ন, নিজেদের বাসভূমি থেকে এরা উত্খাত হলে পৃথিবী থেকে এরা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হয়ে যাবে। এই সংকটের বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতেই ২১ মার্চ বিশ্ব অরণ্য দিবস পালন করা হয়।
সূত্র: amardeshonline.com
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019