দশ বছর হল সার্কাসে খেলা দেখাচ্ছে। একবার মা-বাবা, ভাই বোন, দিদিদের সঙ্গে সার্কাসে খেলা দেখতে গিয়ে ভালো লেগে যায় হাওয়ায় দড়ি ধরে ঝুলে খেলা দেখানোর ঝুলাওয়ালাকে। সেটা ছিল বম্বে সার্কাস। তখনই রিবুর পরিবারের লোকজন ছেলের সঙ্গে তার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে দিয়ে দেয় দু’জনের। বিয়ে হয়েছিল ২০০৩ সালে সার্কাসের তাঁবুতেই। বাইরে থেকে পণ্ডিতকে ডেকে আনা হল, আমার মা বাবা, ভাই বোন, সবাই সঙ্গেই ছিল, তাঁবুর সামনে ফুল দিয়ে সাজিয়ে বিয়ের মণ্ডপ তৈরি হল, তার পর সার্কাসেরই সব লোকজন, চেয়ার নিয়ে বসে গেল, পণ্ডিত মন্ত্র পড়ে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিল। আমার ইচ্ছে কিছু দিন পর আমি গুজরাতের রাজকোটে চলে যাব, সেখানে ফ্ল্যাট কিনে আমি বাচ্চাদের পড়াব আর আমার বর খেলা দেখাবে। এখন আমি পাখি আর কুকুরের খেলা দেখাই আর সময় পেলে মেয়েকে এ বি সি ডি শেখাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্র্যাকটিস তার পর বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, স্নান সেরে মেয়েকে নিয়ে রোদ পোহাই। দুপুর ১ টা থেকে খেলা দেখানো শুরু হয়ে যায়। ন’টায় খেলা শেষ হয়। তখন রাতের খাওয়া সেরে সবাই মিলে এক সঙ্গে টিভিতে সিরিয়াল দেখি’।
সে আবহে অস্ফূটেই বেজে ওঠে ‘জিনা ইয়াহা, মরনা ইয়াহা, ইসকে সিভা জানা কাঁহা’...বছর ষাটেকের কল্যাণী পোদ্দারের জীবনের গানই তো এটা। ইনি নিজের পুরো জীবনটাকেই দিয়ে দিয়েছেন সার্কাসকে। ন’বছর বয়স থেকে সার্কাসে খেলা দেখানো শুরু, সার্কাসেই ভালবেসে বিয়ে, বাচ্চারাও বড় হয়েছে সার্কাসের তাঁবুতেই। এখন তিনি আর খেলা দেখান না, সার্কাসের নতুন মেয়েদের ট্রেনার আর গার্ডের ভূমিকায় আছেন। ‘আগে আমরা যখন খেলা দেখাতে আসতাম তখন খাওয়াদাওয়া ছাড়া আর কোনও টাকা পয়সা পাওয়া যেত না, এখন তো যারা নতুন আসছে তারা প্রতি দিন তিনশো টাকা করে পায়। খেলা অনুযায়ী রেট বাড়ে। তার পর যাকে যত সুন্দর দেখতে হবে সেই অনুযায়ীও রেট বাড়ে। যারা ভালো খেলা দেখায়, তারা প্রায় কুড়ি পঁচিশ হাজার টাকাও রোজগার করে। এর সঙ্গে আছে ওভার টাইম, চার হাজার টাকা পাওয়া যায়’।
সূত্র: এই সময়, রবিবায়োয়ারি, ৮ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/21/2020