আমি মানে, পটলডাঙার প্যালারামকে তোমরা কে না চেনো ? বছরের অর্ধেক সময় পিলেজ্বরে ভুগি আর তাই সারা বছরই জোটে হয় বাসক পাতার রস নয় তো পটল দিয়ে শিঙ্গি মাছের ঝোল। এই সব খেয়ে কবে কার বুদ্ধি খুলেছে ? তাই পরপর তিন বার ম্যাট্রিকে ঘায়েল হয়েছি। প্রতি বারেই ধাক্কা খেয়েছি সংস্কৃত আর অঙ্কেতে। শেষ বারের বার ফেল করার পর বাবা বলেছিলেন আমার মাথার মধ্যে ঘিলু বলে কিছু আছে কিনা সেটা নাকি বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত। আমার কি মনে হয় জানো তো, ওই বিশেষজ্ঞরা কিছুই বুঝতে পারবে না, কারণ ওরা নিশ্চয়ই বিশেষ ভাবে অজ্ঞ। আজ শনিবার গড়ের মাঠে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ, তাই সকাল থেকে উত্তেজনায় গায়ের লোম মাঝে-মাঝেই খাড়া হয়ে উঠছে ! সকালটা কী ভাবে কাটাব কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। খেলার মাঠে খুব চেঁচাতে হবে বলে ছোড়দির হারমোনিয়ামটা বাজিয়ে খুব করে গলা সেধে নিচ্ছিলাম। কিন্তু কোথা থেকে মেজদা গাঁক-গাঁক করে তেড়ে এল। আসলে সব মেজদারাই বোধহয় এ রকম মেজাজী হয়ে থাকে। মেজদা এসেই তো প্রথমে হারমোনিয়ামটা কেড়ে নিল, তার পরে বলতে লাগল, “ব্যাটা ফেল করে বাড়িতে থেকে সবার কানের মাথা খাচ্ছে! তোর অঙ্কের মাথা যেমন ঠিক তেমনই তোর সুর-জ্ঞান! দাঁড়া তোকে জব্দ করছি।” ,বলেই মেজদা টেবিলের ওপর থেকে রাইটিং প্যাডটা টেনে নিয়ে কী সব লিখতে শুরু করে দিল।
কটা ০?
কটা ১?
কটা ২?
কটা ৩?
কটা ৪?
কটা ৫?
কটা ৬?
কটা ৭?
ওপরের মতো আটটা ড্যাশ দিয়ে বলতে লাগল, “দেখ প্যালা, তোকে একটা আট অঙ্কের (digit ) সংখ্যা (number ) দিলাম। সব চেয়ে বাঁদিকেরটা বোঝায় সংখ্যাটার মধ্যে মোট কটা ‘শুন্য’ আছে, ঠিক পরেরটার বোঝায় সংখ্যাটার মধ্যে মোট কটা ‘এক’ আছে। ” এই রকম করে শেষের ড্যাশ অবধি গিয়ে বলল, “শেষেরটা বোঝাচ্ছে সংখ্যাটার মধ্যে মোট কতগুলো ‘সাত’ আছে। ” আমি হতবাক এবং সাথে সাথে নির্বাক। ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়ে আছি দেখে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠল, “শোন প্যালা , এটা যদি সমাধান করতে পারিস ভালো, না হলে খেলা দেখতে যাওয়া ক্যানসেল, সেই সাথে মা’কে বলে দিচ্ছি দুপুরবেলা যেন তোকে শুধু গাঁদাল পাতার ঝোল দিয়ে ভাত খেতে দেয়।” কথাগুলো বলে মেজদা যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিল ঠিক তেমনি ঝড়ের বেগে বেরিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু ফাঁপরে পড়লাম আমি। বন্ধুরা প্লিজ আমাকে বাঁচাও।
(উত্তরটা লেখার মধ্যেই লুকিয়ে আছে! তোমাদের দু’টো একই নিয়মের চার অঙ্কের সংখ্যার উদাহরণ দিলাম, ২ ০ ২ ০ আর ১ ২ ১ ০।)
সূত্র: কুণাল চক্রবর্তী, bigyan.org.in
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020