১৯৮৬ সালে বারানসীর ঘাট থেকে শুরু হয়েছে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’-এর বহু শত কোটি টাকার যাত্রা। জনতা ও সেচ্ছাসেবী বেসরকারী সমীক্ষক সংস্থার মতে এর নিট ফল শূন্য। ভারতের
Location / Parameters |
Biochemical Oxygen Demand (mg/l) |
Fecal Coliform Count / 100ml |
At beginning of the Varanasi City … Near Assi/Tulsi ghat |
3-8 mg/l |
20,000 – 100,000 per 100ml |
Downstream of the Varanasi City … Varuna confluence with Ganga |
20-50 mg/l |
100,000,000-200,000,000 per 100ml |
Permissible limits for bathing |
Less than 3mg/l |
Less than 500 per 100ml |
সনাতন নগরী, প্রাচীনতম তীর্থ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র, সেই বারাণসীতে গঙ্গাদূষণের মাত্রা ১-২ million mpn/ml।
পুণ্যস্নান কি পাপস্নানে রূপান্তরিত? পাঁচ-দশ হাজার বছর আগে গঙ্গা সত্যই প্রাণদায়ী কলুষনাশিনী ছিল। এতদিনকার অজস্র পাপের ভারে জর্জরিত গঙ্গা আজ মৃতপ্রায়। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। অথচ গঙ্গার পার বাঁধানো ও গঙ্গাপারের সৌন্দর্য্যায়নের অন্যান্য ব্যবস্থা যা গঙ্গা পরিকল্পনার নামে কলকাতায় বা বারাণসীতে নেওয়া হয়েছিল গত তিরিশ বছরে তা অত্যন্ত হাস্যকর। মুমূর্ষু দেহে অলঙ্কার পরিয়ে সেবা করার মতোই নিষ্ঠুর অপব্যয়।
সম্প্রতি গঙ্গাকে বাণিজ্যিক যাতায়াতের জলপথে রূপান্তরিত করা ও বারাণসী থেকে হুগলি পর্যন্ত ১৬০০ কিমি পথে গঙ্গা ও তার উপনদীর উপর ১৬টি বাঁধ নির্মাণ করার কথা বলা হচ্ছে সরকারপক্ষ থেকে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত নৌ চলাচলে নদীর দূষণ বাড়বে এবং ১৬টি বাঁধ নদীস্রোত রুদ্ধ করে ১৬টি বড় পুকুর তৈরি করবে। এই উদ্যোগ গঙ্গার স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা পুনরুদ্ধারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী।
গঙ্গার উচ্চপ্রবাহে রয়েছে অলকানন্দা নদীতন্ত্র। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্মীয়মান ২৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ত্যাগ করতে হবে গঙ্গা ও তার দুই তীরের জীবজগৎ বাঁচাতে। ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরাই এটা চেয়েছেন। নেপালের নদীগুলি যেমন মহাকালী, কর্নালী, গণ্ডক, কোশী, গঙ্গানদীর মোট জলের ৪০ শতাংশ এবং শুখা মরশুমে গঙ্গার জলের ৭০ শতাংশ দেয়। এদের উপরে যত বাঁধ নির্মিত হয় গঙ্গার জলের বেগ ও পরিমাণ তত কমে। কিন্তু প্রধানত ভারত সরকারের পরিচালনায় ভারত-নেপাল যৌথ উদ্যোগে বাঁধগুলি করা হচ্ছে ও হবে।
উন্নয়নের নামে করা এই সব প্রকল্প কিন্তু ৪০-৫০ কোটি ভারতীয় (সাথে আরও আনুমানিক সাত কোটি বাংলাদেশি ও নেপালবাসীর) জীবনরেখা উদ্ধারের নীতির পরিপন্থী। South Asia Network on Dams, Rivers and People জানাচ্ছে Indian Himalayas moving towards highest Dam Densities in the World। নির্মাণরত ও নির্মাণের উদ্যোগ হয়েছে এমন বাঁধের সংখ্যা প্রায় ৪০০। Ganga basin would have the highest number of dams (1/18 km of river channel dammed) in the world, followed by the Brahmaputra (1/35 km) and the Indus (1/36 km)।
নিত্যপূজার উপচার বাসি ফুল, ফল, পাতা, ছাই, ধূপকাঠির শেষাংশ নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে, বদলে মাটিতে পুঁতে দেওয়া যেতে পারে। ঔপচারিক পূজার বদলে নামজপ, গায়ত্রী জপ, সূর্যপ্রণাম, আসন, মনঃসংযোগ, ধ্যান, প্রাণায়াম বা ব্যবহারিক কর্মের নিষ্কাম যোগে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। চতুর্বর্গপুরুষার্থ ও কর্মযোগের আদর্শ সকল যুগের উপযোগী।
দুর্গাপূজা ইত্যাদি সম্মিলিত পূজা এবং সমবেত যাগযজ্ঞের শেযে বর্জ্য উপচার এবং মূর্তি নদী বা পুকুরে না ফেলে জৈব ও অজৈব রাসায়নিক উপাদানগুলির প্রতিটির নিজ নিজ পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শাস্ত্রীয় নিষেধ নেই, কেবল আচারে অনুমোদন দিতে হবে সকলকে, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
মিউনিসিপ্যালিটি ও পঞ্চায়েতগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে পয়ঃপ্রণালীর জল নদীতে না যায়। মানুষ ও গৃহপালিত পশুর মৃতদেহ যেন নদীতে ফেলা না হয়। পশুর মৃতদেহ কবর দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
মোট জলপ্রবাহ ও স্রোতের বেগ বাড়াতে নদীর বুকের বাঁধগুলি তুলে দিতে হবে। নদীতে বাঁধ দিলে নদীর অপমৃত্যু হয়। নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে ৩৪টি নদীবাঁধ সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। মোট জলপ্রবাহ বেশি থাকলে আগত বিষ দ্রুত লঘু হয়ে যায়, স্রোতের বেগ বেশি থাকলে বিষ দ্রুত দূরে অপসারিত হয়।
গঙ্গার উৎস থেকে প্রবাহ বরাবর সর্বত্র গঙ্গায় নোংরা জল ফেলা বন্ধ না করলে এবং গঙ্গার কোনও নদী-উপনদীতে নতুন করে বাঁধ দিয়ে গঙ্গার জলপ্রবাহ কমিয়ে দেওয়া বন্ধ না করলে, নদীতে মৃতদেহ ফেলা বন্ধ না করলে, শহরগুলিতে গঙ্গার দুইপারে কঠিন আবর্জনা জমানো বন্ধ না করলে, কলকারখানা ও শহরের পয়ঃপ্রণালীর শেষ-মুখ শোধনাগারে না গেলে এবং সারা দেশে বারো মাসে তের পার্বণের অজস্র (কয়েক কোটি) মূর্তি নিমজ্জন বন্ধ না করলে, গঙ্গায় প্রাতঃকৃত্য বন্ধ না করলে কিছুতেই কোনও এলাকায় গঙ্গাদূষণ কমানো যাবে না। ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক চেষ্টা কোনও সুফল দেয়নি, দেবে না।
সুপ্রিম কোর্ট বলতে বাধ্য হয়েছেন, ২০০ বছরেও গঙ্গাশোধন হবে না। আমরা মঙ্গল গ্রহে যেতে সফল, কিন্তু গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণে ? যা ৫০ কোটি ভারতীয়ের জীবনরেখা ? গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণ আর কত দিন রাজনীতিক বা রাষ্ট্রনায়কদের মুখের বুলি হয়ে থাকবে ? বৃথাই হিন্দুরা বলে গঙ্গা আমাদের মা!
সূত্র: bigyan.org.in
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020