গঙ্গা ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় নদীও বটে। দৈর্ঘ্য, ২৫২৫ কিমি; উৎসস্থল, পশ্চিম হিমালয়ে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। জলপ্রবাহের ক্ষমতা অনুযায়ী এটি বিশ্বের প্রথম ২০টি নদীর একটি। গাঙ্গেয় অববাহিকার জনসংখ্যা ৪০ কোটি এবং জনঘনত্ব ৩৯০/বর্গকিমি। এটিই বিশ্বের সব চেয়ে জনবহুল নদী অববাহিকা। মূল গঙ্গা নদীর উৎসস্থল ভাগীরথী ও অলকানন্দা নদীর সঙ্গমস্থল। হিন্দু সংস্কৃতিতে ভাগীরথীকেই গঙ্গার মূল প্রবাহ বলে মনে করা হয়। যদিও অলকানন্দা নদীটি দীর্ঘতর। অলকানন্দার উৎসস্থল নন্দাদেবী, ত্রিশূল ও কামেট শৃঙ্গের বরফগলা জল। ভাগীরথীর উৎস গোমুখের গঙ্গোত্রী হিমবাহ (উচ্চতা ৩,৮৯২ মি)।
গঙ্গার জলের উৎস অনেকগুলি ছোট নদী। এর মধ্যে ছ’টি দীর্ঘতম ধারা এবং গঙ্গার সঙ্গে তাদের সঙ্গমস্থলগুলিকে হিন্দুরা পবিত্র মনে করে। এই ছ’টি ধারা হল অলকানন্দা, ধৌলীগঙ্গা, নন্দাকিনী, পিণ্ডার, মন্দাকিনী ও ভাগীরথী। পঞ্চপ্রয়াগ নামে পরিচিত পাঁচটি সঙ্গমস্থলই অলকানন্দার উপর অবস্থিত। এগুলি হল বিষ্ণুপ্রয়াগ (যেখানে ধৌলীগঙ্গা অলকানন্দার সঙ্গে মিশেছে), নন্দপ্রয়াগ (যেখানে নন্দাকিনী মিশেছে), কর্ণপ্রয়াগ (যেখানে পিণ্ডার মিশেছে), রুদ্রপ্রয়াগ (যেখানে মন্দাকিনী মিশেছে) এবং সবশেষে দেবপ্রয়াগ, যেখানে ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলনের ফলে মূল গঙ্গা নদীর জন্ম হয়েছে।
এর পর গঙ্গা কনৌজ, ফারুকাবাদ ও কানপুর শহরের ধার দিয়ে একটি অর্ধ-বৃত্তাকার পথে ৮০০ কিলোমিটার পার হয়েছে। এই পথেই রামগঙ্গা (বার্ষিক জলপ্রবাহ ৫০০ কিউমেক) গঙ্গায় মিশেছে। এলাহাবাদের ত্রিবেণী সঙ্গমে যমুনা নদী গঙ্গায় মিশেছে। সঙ্গমস্থলে যমুনার আকার গঙ্গার চেয়েও বড়। যমুনা গঙ্গায় ২৯৫০ কিউমেক জল দেয় যা উভয় নদীর যুগ্মপ্রবাহের জলধারার মোট ৫৮.৫%।
এখান থেকে গঙ্গা পূর্ববাহিনী নদী। যমুনার পর গঙ্গায় মিশেছে কাইমুর পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদী তমসা (বার্ষিক জলপ্রবাহ ১৯০ কিউমেক)। তার পর মিশেছে দক্ষিণ হিমালয়ে উৎপন্ন নদী গোমতী (বার্ষিক জলপ্রবাহ ২৩৪ ঘনমি/সে)। তার পর গঙ্গায় মিশেছে গঙ্গার বৃহত্তম উপনদী ঘর্ঘরা (বার্ষিক জলপ্রবাহ ২,৯৯০ ঘনমি/সে)। ঘর্ঘরার পর দক্ষিণ থেকে গঙ্গার সঙ্গে মিশেছে শোন (বার্ষিক জলপ্রবাহ ১,০০০ ঘনমি/সে), উত্তর থেকে মিশেছে গণ্ডকী (বার্ষিক জলপ্রবাহ ১,৬৫৪ ঘনমি/সে) ও কোশী (বার্ষিক জলপ্রবাহ ২,১৬৬ ঘনমি/সে)। ঘর্ঘরা ও যমুনার পর গঙ্গার তৃতীয় বৃহত্তম উপনদী কোশী।
পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার গিরিয়ার কাছে গঙ্গা দু’টি শাখায় বিভক্ত হয়েছে, পদ্মা ও ভাগীরথী। পদ্মা প্রশস্ততর শাখা। এটি দক্ষিণ-পূর্বগামী হয়ে বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পড়ে। বাংলাদেশে যমুনা নদীর (ব্রহ্মপুত্রের বৃহত্তম শাখানদী) সঙ্গমস্থল পর্যন্ত গঙ্গার মূল শাখাটি পদ্মা নামে পরিচিত। আরও দক্ষিণে গিয়ে যমুনা ব্রহ্মপুত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখানদী মেঘনার সঙ্গে মিশে মেঘনা নাম ধারণ করে শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। গঙ্গার শীর্ণতর শাখা ভাগীরথী দক্ষিণগামী এবং যথাক্রমে ভাগীরথী ও হুগলি নাম ধারণ করে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর বদ্বীপ বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ। এর আয়তন প্রায় ৫৯,০০০ বর্গকিমি। বঙ্গোপসাগরের তীর ধরে গেলে এই বদ্বীপের দৈর্ঘ্য ৩২২ কিমি। গঙ্গা-মেঘনা নদীর মিলিত জলপ্রবাহের চেয়ে একমাত্র আমাজন ও কঙ্গো নদীর জলপ্রবাহের পরিমাণ বেশি। পূর্ণ প্লাবনের কথা ধরলে একমাত্র আমাজনই এই মিলিত প্রবাহের চেয়ে বেশি জল বহন করত।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে গঙ্গার দৈর্ঘ্য ২৫০ কিলোমিটার। হৃষীকেশের কাছে গঙ্গা হিমালয় ত্যাগ করে তীর্থশহর হরিদ্বারে গাঙ্গেয় সমভূমিতে পড়েছে। গঙ্গার মূলধারাটি হরিদ্বারের আগে সামান্য দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী হলেও হরিদ্বার পেরিয়ে তা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়েছে। হরিদ্বারে একটি বাঁধ গড়ে গঙ্গা খালের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের দোয়াব অঞ্চলে সেচের জল পাঠানো হয়। এখানেই সর্বনাশের শুরু। ১৮৫৪তে গঙ্গায় প্রথম বাঁধ পড়ল হরিদ্বারে। কমল মূল গঙ্গায় মোট জলপ্রবাহ।
সূত্র: bigyan.org.in
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/9/2020