আলিপুরদুয়ার জেলায়, পূর্ব হিমালয়ের নীচে, তোর্সা নদীর তীরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। ২১৬.৫১ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যান নদীতীরস্থ গাছপালা দিয়ে তৈরি। এই অরণ্যের বৈচিত্র্যময় প্রাণী ও উদ্ভিদকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে একে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ভারতীয় এক শিঙা গন্ডার, রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এখানেই। এটি একটি লুপ্তপ্রায় প্রজাতির পশু। পাশের চিলাপাতা অরণ্য, জলদাপাড়া ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের মাঝে হাতির করিডোর হিসেবে কাজ করে। উদ্যানের খুব কাছেই পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে চলেছে মলঙ্গি নদী। মলঙ্গি, তোর্সা, হলং, চিরাখাওয়া, কালিঝোরা, সিসামারা, ভালুকা ও বুড়ি তোর্সা বাহিত পলিতে সমৃদ্ধ জলদাপাড়া নানা বৈচিত্র্যের প্রাণী ও উদ্ভিদের শেষ আশ্রয় হিসেবে ক্রিয়াশীল।
জলদাপাড়া গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। কয়েকটি মাত্র নির্দিষ্ট এলাকায় এই লুপ্তপ্রায় সৌন্দর্যকে খুঁজে পাওয়া যায়। অসমের কাজিরাঙা ও পবিতারাকে বাদ দিলে, জলদাপাড়াই দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়। এখানকার ঘাসে ঢাকা জলাভূমি এই গন্ডারের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।
গন্ডার বাদে এই অরণ্যে আছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, নানা প্রজাতির হরিণ, শম্বর, বন্য শুকর, বাইসন ও আরও নানা চেনা-অচেনা পশু। বন্যপ্রাণী দেখা ছাড়াও এখানে হাতির পিঠে চড়ার সুযোগও রয়েছে। যারা পাখি দেখতে ভালোবাসেন তাঁদের কাছে জলদাপাড়া অবশ্য গন্তব্য। ভারতের হাতে গোনা যে ক’টি জায়গায় বেঙ্গল ফ্লোরিকান দেখা যায়, তার মধ্যে জলদাপাড়া অন্যতম। অসংখ্য রকমের পাখি ছাড়াও জলদাপাড়ায় অন্তত ৮ প্রকারের কচ্ছপ পাওয়া যায়। হাতির পিঠে চেপে ঘোরা ছাড়াও জিপে চড়ে অরণ্যে সাফারিও জলদাপাড়ার অন্যতম আকর্ষণ। জলদাপাড়ায় থাকার জন্য দু’টি ব্যবস্থা আছে। একটি জঙ্গলের ঠিক বাইরে মাদারিহাট বনবাংলো এবং অন্যটি অরণ্যের অন্দরে হলং বনবাংলো।
জলদাপাড়া না দেখলে পশ্চিমবঙ্গ দেখা অসম্পূর্ণ। এর আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে অমোঘ।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/10/2019
জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের প্রবেশদ্বার মাদারিহাট।