কালী বা কালিকা হলেন একজন হিন্দু দেবী। তাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত ধর্মাবলম্বীরা কালীর পূজা করেন। তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশ জন দেবীর মধ্যে প্রথম দেবী। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদিকারণ মনে করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে দেবী কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।
পুরাণ ও তন্ত্র গ্রন্থগুলিতে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে তাঁর মূর্তিতে চারটি হাতে খড়্গ, অসুরের ছিন্নমুণ্ড, বর ও অভয়মুদ্রা; গলায় মানুষের মুণ্ড দিয়ে গাঁথা মালা; বিরাট জিভ, কালো গায়ের রং, এলোকেশ দেখা যায় এবং তাঁকে তাঁর স্বামী শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাণেশ্বর শিবমন্দিরের মতো একই উচ্চতাবিশিষ্ট গম্বুজাকৃতি আরেকটি যে মন্দির সহজেই নজর কাড়ে তা হল সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। ইটের তৈরি ৩২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মন্দিরটি আটচালা এবং গম্বুজ শোভিত। এ হেন মন্দির কোচবিহারে আর নেই বললেই চলে। গম্বুজের উপর প্রথাগত ভাবে পদ্ম, আমলক, কলস ও ত্রিশূল দেখা যায়। মন্দিরের প্রবেশপথ থেকে গর্ভগৃহ ৫ ফুট নীচে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়। মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে সিঁড়িপথে কয়েক ধাপ নামলে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর আসন নজরে পড়ে। চতুর্ভুজা ধাতুময়ী ক্ষুদ্র সিদ্ধেশ্বরী কালিকা পদ্মের ওপর উপুড় ভাবে শায়িত শবরূপী শিবের পিঠের ওপর উপবিষ্টা। উপরে দু’হাতে রয়েছে কর্তরী ও খড়্গ, নীচের দু’হাতে রয়েছে দর্পণ এবং অভয়মুদ্রা। দেবীর ভৈরব হল সিদ্ধেশ্বর। দেবীকে কালী জ্ঞানে পূজা করা হয় থাকে। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দক্ষিণ পাশে বৃক্ষরূপিনী কামাক্ষ্যা দেবীর থান আছে। একটি প্রাচীন কামরাঙা বৃক্ষই দেবীর প্রতীক এবং পীঠস্থান রূপে পরিগণিত। পূর্বে অসমের অন্তর্গত এবং পরে কোচবিহারের অধীন এই কামাক্ষীয় মন্দির বিখ্যাত। কিংবদন্তি অনুযায়ী, কামরূপের পৌরাণিক রাজা নরকাসুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। প্রাচীন পৌরাণিক উপাখ্যানে দেখা যায়, বর্তমান কোচবিহার, গোয়ালপাড়া, অসম অঞ্চলে নরকাসুরের পুত্র ভগদত্ত রাজত্ব করতেন। এই ভগদত্তের বংশে রাজা ভাস্করবর্মনের জন্ম। এই বংশের বিলুপ্তির পর কোচবিহার অঞ্চলটি রাজা ধর্মপাল অধিকার করেছিলেন। পরবর্তীকালে এর ধ্বংসাবশেষের উপর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা নরনারায়ণ দু’টি নাটমন্দির পঞ্চরত্নসমেত ইটের পরিখা দ্বারা বেষ্টিত বর্তমানের এই কামাক্ষীয় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে ভগবতী মূর্তি।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/25/2020