বহরমপুর থেকে ১১ কিমি দূরে রাঙামাটি - গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ। বহরমপুর থেকে খাগড়া ঘাট হয়ে যাওয়া যায় আজিমগঞ্জ। সেখান থেকে নৌকায় ভাগীরথী পেরিয়ে জিয়াগঞ্জ। আজিমগঞ্জে গঙ্গার তীরে বড়নগরের মন্দির। নাটোরের রানি ভবানীর পৃষ্ঠপোষকতায় শুধু এই মন্দিরটি কেন, মন্দিরের পর মন্দির গড়ে উঠেছিল এই গঙ্গার তীরে। তাঁর ইচ্ছা ছিল বড়নগরকে কালীধামে পরিণত করা। পঞ্চমুখী পঞ্চান্ন শিব, চারবাংলা মন্দির মুখোমুখি অবস্থান করছে, দেবতা অবশ্যই শিব ঠাকুর। প্রতিটি মন্দিরের টেরাকোটার অলংকরণ লক্ষ্য করা যায়। রামায়ণ, মহাভারত ছাড়াও নানা পৌরাণিক আখ্যান দেওয়ালে স্থান পেয়েছে। রানি ভবানীর অপূর্ব কীর্তি ভবানীশ্বর শিবমন্দির। আটকোণাকৃতি, উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট, মন্দিরটি গম্বুজাকৃতি; মন্দিরের মাথায় আটটি পাপড়িবিশিষ্ট পদ্মের অবস্থান। আটটি প্রবেশদ্বার। অলিন্দযুক্ত ভাস্কর্যময় মন্দিরটির পাশে তাঁরই নির্মিত আরও একটি মন্দিরে মহিষমর্দিনী দুর্গার রাজরাজেশ্বরীর মূর্তিটি অষ্টধাতুতে গড়া, মন্দিরাভ্যন্তরে প্যানেলের মধ্যে স্থাপিত; অপূর্ব কারুকার্যমন্ডিত, অলংকরণ সমৃদ্ধ, রণসম্ভারে সজ্জিতা এমন মূর্তি খুব কমই নজরে আসে। মন্দিরে আরও দেবদেবীর অধিষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়, যেমন বিষ্ণু, জয়দুর্গা, মহালক্ষ্মী, মদনগোপাল ইত্যাদি। অদূরেই রানি ভবানী কন্যা তারাসুন্দরী নির্মিত গোপাল মন্দিরটি আজ জীর্ণ। পাশেই রয়েছে গঙ্গেশ্বর, কস্তুরীশ্বর, নাগেশ্বর শিব মন্দির। এগুলিও জরাজীর্ণ। রাজবাড়িটিও বিলুপ্তপ্রায়। বেলডাঙ্গা থানার অন্তর্গত নওপুকুরিয়া গ্রামে মা ডুমনীর পুজো খুব ধুমধামে হয়ে থাকে। দেবীমূর্তি চর্তুভুজা এবং প্রস্তরময়। অনেকে এই মূর্তিকে বৌদ্ধতারা মূর্তি বলে থাকেন। সুতী থানার বংশবাটি গ্রামে বৃদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা অত্যন্ত প্রাচীন। প্রস্তর মুর্তি তবে পক্ষীরূপা। কথিত আছে দ্বাপরে কংস কর্তৃক নিধন হওয়ার ভয়ে যশোদার কন্যাসন্তান পক্ষীরূপ ধারণ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেই কল্পনা করে এই দেবী মূর্তির প্রতিষ্ঠা। রূপপুর গ্রামে রুদ্রদেবের মন্দির ১৮৯২ সাল নাগাদ তৈরি হয়েছিল। এটি দক্ষিণমুখী এবং সামনে বারান্দাওয়ালা একটি সাধারণ পাকা দালানঘর মাত্র। মন্দিরাভ্যন্তরে একটি বেদির উপর প্রায় দেড় ফুট উঁচু ও এক ফুট চওড়া বিশিষ্ট কালো পাথরের খোদিত ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর বুদ্ধদেব যোগাসনে উপবিষ্ট। মূর্তিটির ডানহাত নাভিমূলে এবং বাম হাত ভূমি স্পর্শিত। এই বুদ্ধমূর্তিই এখানে রুদ্রদেব নামে খ্যাত এবং শিবের ধ্যানে পূজিত। মন্দিরে রুদ্রদেবের মূর্তি ব্যতীত দারুময় বাণেশ্বর মূর্তি ও মন্দিরের দু’পাশে মোট চারটি চারচালার শিব মন্দির আছে। কান্দি থানার দোহালিয়া গ্রামে দক্ষিণা কালী মন্দিরটি সিদ্ধপীঠ বলে খ্যাত। মন্দিরটি বারান্দাযুক্ত পাকা দালান মন্দির। মন্দিরাভ্যন্তরে উঁচু বেদির উপর সিঁদুর চর্চিত হয়ে দেবী কূর্মাকৃতি ব্রহ্মশিলা বিশেষ। শিলার গায়ে সোনার তৈরি জিভ, চোখ লাগানো আছে এবং গ্রামবাসীগণ এই শিলাটিকে দক্ষিণাকালী রূপে পূজা করে থাকেন। কালী মন্দিরের পশ্চিম দিকে পাঁচটি এবং পূর্বে দু’টি চার চালা শিবমন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলি কান্দির সিংহরাজ পরিবার কর্তৃক নির্মিত। ভরতপুর থানার বৈদ্যপুর গ্রামে সুউচ্চ এক তলা খিলানযুক্ত বারান্দাসহ পাকা মন্দিরে ধর্মরাজ প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরে চারটি বিগ্রহ- মনোহর রায় আকার বৃহত্তম ঢিবি, ধর্মরাজ, চম্পক রায় গোলাকৃতি ছোট ঢিবি, চাঁদ রায় আকৃতি চ্যাপ্টা। ব্রহ্মার ধ্যানে ধর্মরাজকে পূজা করা হয় বলে জানা যায়। অদূরেই শক্তিপুর গ্রামে বিখ্যাত কপিলেশ্বর মন্দির। আদি মন্দিরটি নাকি প্রস্তর নির্মিত ছিল। বহুপূর্বেই তা গঙ্গাবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে। সেই মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ ইতস্তত ছড়ানো দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমান মন্দিরটি ইটের তৈরি, দক্ষিণমুখী। দৈর্ঘ্য ১৮ হাত, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৮ এবং ৪০ হাত। এই মন্দিরের নিকটেই ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চন্দ্রশেখর শিবমন্দির। বাঘডাঙ্গার রানি মুক্তকেশী দেবী কর্তৃক মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020