১৪৯৫ সালে বিপ্রদাস পিল্লাই রচিত মনসামঙ্গল কাব্যে হুগলি নামের উল্লেখ দেখা যায়। এর থেকে বোঝা যায় জেলার নামকরণ বিদেশিকৃত নয়। কারণ এই রচনা কালের ২২ বছর পর পর্তুগিজরা বাংলায় প্রবেশ করেছিল। ১৫৯৮ সালে রচিত আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থেও হুগলি নামের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ত্রিবেনীতে অবস্থিত জাফর খাঁর মসজিদ ও তাঁর মাদ্রাসায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠা তারিখ থেকে অনুমান করা যায় ১২৯৮ সালে জেলার উত্তারংশ মুসলমান শাসনভুক্ত হয়েছিল। এই হুগলি জেলার অন্যতম পর্যটন স্থল ইমামবাড়া।
হাওড়া থেকে ট্রেনে হুগলি। স্টেশন থেকে রিকশায় ইমামবাড়া। কিংবা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নৈহাটি হয়ে গঙ্গা পেরিয়ে হুগলি ঘাট স্টেশন। সেখান থেকে হাঁটাপথে ইমামবাড়া। শিয়াপন্থী মুসলিম তীর্থ ইমামবাড়া। ইমামবাড়া কথার অর্থ ইমামদের থাকার জায়গা। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে এই শব্দে বড় হলঘর বোঝায়। শিয়াপন্থী মুসলিমরা মহরম উদ্যাপনের জন্য এটা তৈরি করেছিল। বিখ্যাত মানবতাবাদী দানবীর হাজি মহম্মদ মহসিনের স্মৃতিতে নির্মিত ইমামবাড়া ১৮৬১ সালে স্থাপিত হয়। এটি তৈরি করতে ২০ বছর সময় লেগেছিল। খরচ হয়েছিল পৌনে ৩ লক্ষ টাকা।
এর স্থপতি ছিলেন কেরামতুল্লা খান। এই দু’তলা বাড়িতে একটি ত্রিভুজাকৃতি অঙ্গন রয়েছে। রয়েছে বহু ঝর্ণা ও কৃত্রিম জলাশয়। কিন্তু ইমামবাড়ার প্রধান আকর্ষণ এর ৮৫ মিটার উঁচু দু’টি স্তম্ভ। স্তম্ভদু’টির একটি পুরুষ ও একটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। দু’টিতেই ১৫২টি করে সিঁড়ি আছে। সব চয়ে উঁচু তলায় একটি ঘড়ি রয়েছে। ঘড়ির যন্ত্রপাতি ও ঘণ্টা আছে নিচের তলাগুলিতে। যদিও এগুলি সাধারণ মানুষকে দেখতে দেওয়া হয় না। ইমামবাড়ার অঙ্গনে একটি সূর্যঘড়ি রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ইমামবাড়ার অবস্থা খুব খারাপ। বহু দিন হয়ে গেল ঝর্ণাগুলি থেকে জল পড়ে না। জলাশয়ের জল সবুজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্তম্ভটি রয়েছে এবং প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর ঘড়ির শব্দ হুগলি ও ব্যান্ডেলের সোনার দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আজও অবশ্য মহরমের উৎসব হয় এখানে। বর্ণাঢ্য মিছিল বেরোয়। বেশ ভালোই ভক্ত সমাগম হয়।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/20/2019