নিমাইয়ের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কাটোয়া। এখানেই তিনি কেশব ভারতীর কাছে দীক্ষা নেন। নাম হয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যগিরি, আমাদের শ্রীচৈতন্য। তাই কাটোয়ার মাহাত্ম্য বৈষ্ণবতীর্থ হিসাবে। নিমাইয়ের সেই দীক্ষাস্থল আজকের গৌরাঙ্গবাড়ি। স্টেশন রোড থেকে কাছারি রোডে এসে মহাপ্রভুপাড়ার বাজার। সেখান থেকে সংকীর্ণ পথে পৌঁছে যাওয়া যায় গৌরাঙ্গবাড়ি। ফটক দিয়ে ঢুকতেই বাঁ দিকে নিমাইয়ের মস্তক মুণ্ডনের স্থান, পাশেই সন্ন্যাসগ্রহণ ও নাম প্রকাশের স্থান। এর পরেই কেশব ভারতীর সমাধি এবং শ্বেত মর্মরে কেশব-চৈতন্যের পায়ের ছাপ। ফটকের ডান দিকে রয়েছে গৌরাঙ্গের অন্যতম পার্ষদ দাস গদাধর ও মধু পরামাণিকের সমাধি। মন্দিরে রয়েছে গৌর-নিতাইয়ের বিগ্রহ। ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত মন্দির বন্ধ।
বৈষ্ণবতীর্থ কাটোয়ার আরেক আকর্ষণ মাধাইতলা। নিমাইকে কলসির কানা ছুড়ে বিখ্যাত হওয়া মাণিকজোড়ের অন্যতম মাধাই। তাঁরই নামে মাধাইতলা। নিমাই ভাগীরথী পেরিয়ে কাটোয়া আসার পথে যে মাধবীকুঞ্জের নীচে বিশ্রাম করেছিলেন সেখানেই আজ মাধাইতলা। এখানেই শেষ জীবনে সাধনভজন করে কাটিয়েছিলেন মাধাই। দীর্ঘকাল জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। ১০৩৭ বঙ্গাব্দে এখানে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন বৃন্দাবনের গোপীনাথ দাস বাবাজি। এখানে গৌর-নিতাই, রাধাগোবিন্দ, গোপীনাথ রয়েছেন নিজেদের মন্দিরে। রয়েছে মাধাইয়ের সমাধিমন্দির।
কাছেই কেতুগ্রাম। মাত্র ১৩ কিলোমিটার। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম পীঠ – বহুলাদেবীর মন্দির। দেবীর বাম বাহু পড়েছিল বহুলায়। বিরল ভাস্কর্যের দেবী এখানে বহুলারূপী কিরীটধারী ত্রিনয়নী চতুর্ভুজা দুর্গা। দেবীর বাঁ দিকে কোষ্ঠীপাথরের অষ্টভুজ গণেশ।
হাওড়া আর শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আসা যায় কাটোয়া, ঘণ্টাতিনেকের পথ। থাকার জন্য বেসরকারি হোটেল ছাড়াও আছে পুরসভার অতিথিনিবাস শ্রাবণী।
অজয় নদ কাটোয়া কেতুগ্রামের অন্যতম আকর্ষণ। বিহারের মুঙ্গের জেলায় একটি ৩০০ মি উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহী অজয় ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং বর্ধমান ও বীরভূম জেলার প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের কাটোয়া সাবডিভিসনের কেতুগ্রাম থানা অঞ্চলে বর্ধমানে প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020